নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে খালের দুই পাড় ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে রাস্তা ও বসতবাড়ী

NewsDetails_01

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে খালের দুই পাড় ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে রাস্তা ও বসতবাড়ী
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের রাজঘাট এলাকায় ফারিখালের উপর রাবার ড্রাম প্রকল্পের নামে খালের দুই পাড় কেটে বর্তমানে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় পাহাড়ী ঢলে বন্যার পানিতে খালের দুই পাড়ে তীব্র ভাঙ্গনে শতাধিক বাড়ীঘর সহ শত বছরের প্রাচীনতম চলাচলের রাস্তা এখন বিলীন হওয়ার পথে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিভাগ (বি.এ.ডি.সি) চাষীদের জন্য এ রাবার ড্রাম প্রকল্পের কাজ শুরু করেন গত ছয় মাস আগে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে বর্তমানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে এখন লাপাত্তা। যার ফলে ফারিখালের দুই পাশে বসবাসরত মানুষ এখন ঝুঁকি নিয়ে জীবনযাপন করছেন বলে জানান স্থানীয় এই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মো: শফি। তিনি এই প্রতিবেদকের নিকট আরো জানান, রাবার ড্রাম প্রকল্পের নামে এইসব কি হচ্ছে। আমাদের বসতভিটা, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট সব কিছু বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শত বছরের রাস্তা বিলীন হয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচল এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
রাবার ড্রামের নামে খালের দুই পাড় কাটার পর বর্তমান বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢলের তীব্র ভাঙ্গনে আমাদের বাপ-দাদার আমলের বসতভিটা, রাস্তাঘাটের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে গেছে। এখন আমাদের দুর্ভোগের শেষ নাই।
আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধ ডা: হাসেম সরওয়ার বলেন, এটাতো রাবার ড্রাম নয়, খাল কেটে কুমির আনার মত অবস্থা হয়ে দাড়িয়েছে আমাদের। বর্তমান বর্ষা মৌসুম হওয়ায় রাতে, চোখে মুখে ঘুম নেই। বৃষ্টি নামলেই দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য, আবু তাহের জানান, রাবার ড্রামটি শুরু করার আগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খালের দুই পাড়ের মাটি দিয়ে ভরাট ও রাস্তা তৈরী করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার ফলে তারা কাজ বন্ধ করে দিয়ে আজ মাস খানেক যাবত এলাকার ছেড়ে উধাও হয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত মোজাম্মেল হক ও হাজ্বী নুরুন নবী জানান, তাদের রাস্তাঘাট, বাড়ীঘর এবং খেত খামার ফলজ বনজ গাছ তীব্র ভাঙ্গনের ফলে সব কিছু পানিতে ভেসে নিয়ে গেছে। এতে লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সরজমিনে এই প্রতিবেদক ঘটনাস্থলে গেলে খালের পাড়ে বসবাসরত সহ পথচারী, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া বেশ কিছু লোকজন বলেন, রাবার ড্রাম প্রকল্প একদিকে উন্নয়নের কথা বলে নির্মাণের আগেই আমাদের পথের ফকির বানিয়ে ছাড়ছে।
সরজমিনে আরো জানা যায়, রাবার ড্রাম নির্মাণের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি খালের পাড় শক্ত করে আরো উন্নত করে বাঁধ দেওয়ার নামে স্কেবেটার দিয়ে খালের দুই পাড়ের মাটি কেটে লন্ডভন্ড করে ফেলেছে। পাশাপাশি রাস্তা তৈরী করে দেওয়ার নাম করে চলাচলের রাস্তাটিও কেটে ফেলেছে। তাদের কাজের কচ্ছপ গতির ফলে বর্ষা মৌসুম চলে আসে। যার ফলে পাহাড়ী ঢলের তীব্র ¯্রােতে খালের দুই পাড় ভেঙ্গে শতাধিক বাড়ীঘর এখন বিলীন হওয়ার পথে। আগামীতে বন্যা হলে আরো বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রাবার ড্রাম নির্মাণের নামে খালের গভীরের অংশ মাত্র ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাও বর্তমানে মাটিতে তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে রাবার ড্রাম প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে তার করার কিছুই নেই। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প ডাইরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডি.আর.সেনাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মো: রাজিব এর সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন এবং খালের দুই পাড় ভাঙ্গনে মেরামতের জন্য যাহা প্রয়োজন তাহাই করে দিবেন। এছাড়া গত কিছুদিন আগেও ভাঙ্গন রোধে তিনি কাজ করেছেন বলে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষোল কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মানাধীন রাজঘাট ফারিখালের উপর রাবার ড্রাম নির্মাণের আগে এক কিলোমিটার করে বেড়িবাধ দেওয়ার কথা রয়েছে। যাহা এখনো পর্যন্ত কিছুই হয় নাই। যার ফলে পাহাড়ী ঢলে খালের দুই পাড় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।
এলাকার শত শত লোকজন ফারি খালের তীব্র ভাঙ্গন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাই।

আরও পড়ুন