নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মাইকিং : এপারে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা

purabi burmese market

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন বিজিবি । (ফাইল ছবি)
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল বেলা থেকে ঘুমধূম ইউনিয়নের কোনারপাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাকে সেখান থেকে সরে যেতে মাইকিং আর গুলির আওয়াজ দিয়ে আতঙ্কিত রাখার কৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এতে ফাঁকা গুলির আওয়াজে সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আর স্থানীয় লোকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ডে দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে অবস্থান করছে ৬৯৩৯ জন রোহিঙ্গা।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সপ্তাহ ধরে কোনারপাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ডের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সূত্র ধরে মিয়ানমারের সেনারা নো ম্যানস ম্যান্ডসহ ওই পারের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও ফাঁকা গুলির আওয়াজ করছে। তারা মাইকিং এ বলছে, তোমাদের (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের ভূখণ্ড ত্যাগ করতে হবে, অন্যথায় মিয়ানমারে চলে আসতে হবে। গত শুক্রবার থেকে তারা জিরো লাইন এসে মাইকিংয়ের পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ইট পাটকেল, ঢিল ও বোতল ছুড়ে মারছে বলে জিরো লাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। আর মাঝে মাঝে গুলির শব্দও শুনে আতঙ্কিত করছে এলাকাবাসীসহ রোহিঙ্গাদেরকে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, গত (৯ ফেব্রুয়ারি) শুক্রবার মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মংডু এসে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর শূন্যরেখায় এসে তিনি রোহিঙ্গাদের বলেন, তোমাদের কাছ থেকে কিছু জানতে আসিনি। তোমাদের বলতে এসেছি। তোমরা অবিলম্বে মিয়ানমারের ভূখণ্ড ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাও। নইলে তোমাদের অবস্থা খারাপ হবে।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রিত রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ ও মোঃ আরিফ জানান, মিয়ানমারের সেনা ও সেখানকার উগ্রপন্থি সশস্ত্র রাখাইন যুবকরা পুলিশের সহযোগিতায় কোনারপাড়া এসে রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে ইট, পাথর, ঢিল ছুড়ে মারছে। এছাড়াও তারা সকাল-বিকাল এসে মাইকিং ও ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে বলছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এস এম সরওয়ার কামাল জানান, স্থানীয় বিভিন্ন লোক সূত্রে জেনেছি মিয়ানমার সেনারা মাইকিং করে শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের সরে যেতে বলছে। নয়তো মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথাও মাইকিংয়ে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে উর্দ্ধতনের অবগত করেছি তবে কোন ধরনের নির্দেশ পাওয়া যায়নি। তবে নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৬৯৩৯জন রোহিঙ্গাকেও স্থনান্তরের ব্যবস্থা বলে আশা করছি। উপজেলর সদর ইউনিয়নের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্থানন্ত করে উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে নেওয়ার পর এখন সদর ইউনিয়নের শুন্য রেখা শুন্য বলেই চলে।
কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চাপ দেয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছি, আমরা সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। এ ছাড়াও সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্টের পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়াসহ সদর ইউনিয়নের সাপমারা ঝিরি, বড় ছনখোলা, দোছড়ি ইউনিয়নের বাহির মাঠ প্রায় দশ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়। এসব রোহিঙ্গাদের রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন এনজিও ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিল। গত মাসে ইউএনএইচসিআর’র সহায়তায় নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের সাপমারা ঝিড়ি, বড় ছনখোলা, দোছড়ি ও ঘুনধুম সীমান্তে বাহিরমাঠ অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু তুমব্রু সীমান্তের প্রায় সাত হাজার অধিক রোহিঙ্গাকে কোথাও সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।