নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে পালিয়ে কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি)
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদেরকে স্বদেশে ফেরত নেয়া হবে, এমনটি খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে পালাতে শুরু করেছে তারা। গত মঙ্গলবার রাতে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশ থেকে এক হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। আর এদিকে পলিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবির কাছে খবর পৌঁছলে ওই রাতে বিজিবি অভিযান চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে আটক করতে সক্ষম হয়। তবে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গারা কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে মিশে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। জিরো পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গাদের পালানো রোধ করতে সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদারের পাশাপশি নিরাপত্তাও বাড়িয়েছে। এসব পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় না দেয়ার জন্য প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে।
সীমান্তে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা আরেফ আহাম্মদ জানান, রাতের আধারে বহু রোহিঙ্গা নো ম্যান্স ল্যান্ড ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অনেককে বিজিবি ধরে আবার ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে কিন্তু এভাবে নো ম্যান্স ল্যান্ডে নিরাপত্তাহীন থাকা সম্ভব নয়।
তবে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমারে আপাততঃ পরিবেশ শান্ত রয়েছে এবং শীঘ্রই প্রথম দফায় জিরো লাইনের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছে।
প্রসঙ্গ, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া অন্তত সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিষয়ে আলোচনা করতে মিয়ানমার যান বাংলাদেশের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল। গত মঙ্গলবার ২০ বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঘুমধুমের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক দিয়ে তারা দেশটিতে প্রবেশ করে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান। পরে বেলা আড়াই টার দিকে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে ফিরে এসে জানান, বৈঠকে মিয়ানমার নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সবার আগে ফেরতের ব্যবস্থা করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের যাছাই বাচাই করে ফেরত নেওয়া হবে।
এসময় দলের সাথে ছিলেন ত্রাণ শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বনিকসহ বিজিবি ও পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধন চালায়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে থাকে। ইতোমধ্যে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে। এদের মধ্যে তুমব্রু নো ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নিয়েছে অন্তত সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গা।
এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে গতবছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেননি।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে নতুন-পুরাতন মিলে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৩৬ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।

আরও পড়ুন