নানা সংকটে লাইনঝিরি মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা
লাইনঝিরি মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রসা। বান্দরবানের লামা পৌরসভা এলাকার লাইনঝিরিতে এ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। পাহাড়ী অধ্যুাষিত অনগ্রসর জনপদে ইসলামি শিক্ষা শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে মাদ্রাসাটি আলোকিত মানুষ তৈরির কারখানা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। ভালো ফলাফলের কারণে ইতিমধ্যে মাদ্রাসাটি বেশ কয়েকবার উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান এবং এ মাদ্রাসার সুপার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানও নির্বাচিত হন এ প্রতিষ্ঠান থেকে। তবে নানা সংকটের মধ্য দিয়েও খুঁড়িয়ে খুঁড়িযে চলছে মাদ্রাসাটির কার্যক্রম।
জানা যায়, লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মো. আলী মিয়া ও লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা মোঃ জাফর উল্লাহ লাইনঝিরি এলাকায় একটি মাদ্রাসা চালু করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। এ দুই গুনি ব্যক্তির আহবানে সাড়া দিয়ে এলাকাবাসির সার্বিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুরের সার্বিক তত্ববধানে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইসমাইল, শিক্ষানুরাগী মো. অলি উল্লাহ, আব্দুল হাকিম ও মো. হানিফ ভান্ডারী দেখভালো করেন। এদের পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে দাখিল স্তরে উন্নতি লাভ করে শিক্ষার আলো ছড়াতে শুরু করে। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাহাবুবর রহমান পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের শুরু থেকে কমিটির সভাপতির দায়িত্ব তুলে নেন পৌরসভার মেযর মোঃ জহিরুল ইসলাম। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে।
তবে এ মাদ্রাসায় ১৭ জন শিক্ষক থাকার নিয়ম থাকলেও এতে আছে ১০জন। এর মধ্যে সহকারী গণিত ১জন, শারীরিক শিক্ষক ১জন, তথ্য ও যোগাযোগ শিক্ষক ১জন, দাখিল ক্বারী ১জন, এবতেদায়ী ক্বারী ১জন এবং এবতেদায়ী মৌলভী ২জন নেই। এবতেদায়ী প্রধান মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ এর এমপিওতে জন্ম তারিখ ভূল থাকার কারণে এমপিও ভুক্তি হতে নাম বাতিল হয়ে যায়। কর্মচারী ৫ জনের মধ্যে অফিস সহকারী, নৈশ প্রহরী ও এমএলএসএস থাকলেও নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদ শুরু থেকে খালি রয়েছে। সম্মিলিতভাবে সহকারী শিক্ষকরা বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান চালাচ্ছেন। বর্তমানে ১ম থেকে দাখিল পর্যন্ত এ মাদ্রাসায় প্রায় ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে। শিক্ষার্থী অনুসারে এখানে শ্রেণী কক্ষ সহ দরকার ১০-১২টি, কিন্তু আছে ৮টি।
নানা সংকটের কথা স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির সুপার মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, শিক্ষক সংকট নিরসনে এনটিআরসি’তে ৩-৪ বার চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। চাহিদা মতে নিয়োগ প্রদান করা হলে সংকট নিরসন হবে। তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন সম্প্রসারণ, মাদ্রসার নিজস্ব অর্থায়নে নতুন ভবনের জন্য জায়গা কেনা সহ শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিদিনের আপ্যায়ন খরচ বহন করে এক উদার মানবিকতার পরিচয় দেন পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।
এদিকে শ্রেণী কক্ষ সংকটের বিষয়ে মাদ্রাসার দাখিল শিক্ষার্থী ছাত্র আরাফাত হোসেন ও রোকসানা আক্তার এবং অভিভাবক সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার আলো ছড়ালেও নেই পর্যাপ্ত শ্রেণী কক্ষ, তার মধ্যে আবার নেই পর্যাপ্ত বসার বেঞ্চও। তাই এক বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসতে হয় ৫-৭জন। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় পাঠদানে দারুন ব্যাঘাত ঘটছে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।
মাদ্রাসার সহকারী সুপার মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, প্রাথমিক থেকে দাখিল ১০ম শ্রেণি নিয়ে ক্লাশ পরিচালনা করা শিক্ষক স্বল্পতার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সংকটের মধ্যেও প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনা করা হয়ে থাকে। ফলে শিক্ষকদের জন্য প্রতিষ্ঠান চলাকালে বিশ্রামের সুযোগ থাকেনা।
এদিকে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইউছুপ জানায়, শুরু থেকেই মাদ্রাসাটির শিক্ষক-শিক্ষিকা, পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের সাথে রয়েছে পারস্পারিক সহযোগীতা ও সহমর্মিতা। সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এটি দিনের পর দিন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে কিছু সংকটের কারণে মাদ্রাসায় পাঠদানে ব্যঘাত ঘটছে বলে শুনেছি। এ সংকট নিরসন করা দরকার।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার উদ্যোগে সম্প্রতি ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন সম্প্রসারণও করা হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ কয়েক মাসের মধ্যে শুরু হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে শ্রেণী কক্ষ সংকট থাকবেনা। এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে আগামী অর্থ বছরে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদ উল্ আলম হোসাইনী জানান, গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লাইনঝিরি মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রসাটি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। মাদ্রাসাটি বেশ কযেকবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নির্বাচিত হয়। কিন্তু মাদ্রাসায় শিক্ষকসহ নানসা সংকট থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে ব্যঘাত ঘটছে।