আমার কাছে নারী মানে সৌন্দর্য।নারী মানে মুগ্ধতা, নারী মানে প্রাণ জুড়ানোর অবয়ব।আমি জীবনে অনেক সৌন্দর্য দেখেছি কিন্তু নারীর চেয়ে সুন্দর আমি আর কিছুতে পাইনি। ছোটবেলায় যখন বইপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম সেদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম জাফলংয়ের পাহাড় দেখে। জাফলংয়ে পৌঁছানোর চার পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে যখন পাহাড়টাকে দেখছিলাম তখন আমি অনুভব করেছিলাম এরচেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই, হতে পারে না। তারপর থেকে আজ অবধি আমার অনুভব বদলে গেছে।জীবনের এই প্রান্তে এসে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে কোনোকিছুর সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকি, তখন আমি অনুভব করি নারীই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সৌন্দর্য।
আজ বিশ্ব নারী দিবস। এই দিবস সংক্রান্ত ফাইলপত্র যেখানে তৈরি হয় এবং সেই অফিসে যারা কাজ করে তারা যদি আরো সুরুচিশীল কিংবা নান্দনিক মনের অধিকারী হত তাহলে আজকের দিনটার নাম হত বিশ্ব সৌন্দর্য দিবস অথবা বিশ্ব প্রাণ জুড়ানো দিবস।
সুন্দর বলতে যারা শুধুমাত্র রূপ লাবণ্যকে জানে বস্তুত তারা সুন্দর বিষয়টাকেই বোঝে না। সুন্দর কেবল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে যা দেখা যায় সেটা নয়।সৌন্দর্য থাকে ভাজে ভাজে পরতে পরতে।একটা বক পাখি যখন ডানা গুটিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকে তখন তাকে যতটা সুন্দর দেখায় তারচেয়ে বেশি সুন্দর দেখায় বক পাখিটি যখন ডানা মেলে নীল দিগন্তে ভাসতে ভাসতে উড়তে থাকে।নারীর সৌন্দর্যও তেমনি বিভিন্ন অধ্যায়ে লুকিয়ে থাকে।সেই সমস্ত অধ্যায় সম্পূর্ণভাবে ওল্টালেই বোঝা যায় নারী কতটা সুন্দর।
আমার মতে, পৃথিবীতে কেউ যদি সত্যিকারের শিক্ষা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে পঁচিশ ভাগ শিক্ষা অর্জন করতে হয় বইপত্র থেকে, আর পঁচিশ ভাগ প্রকৃতি থেকে এবং বাকী পঞ্চাশ ভাগ নারীর কাছ থেকে।পৃথিবীতে টিকে থাকার মূলমন্ত্র হলো সহ্য ক্ষমতা। যে যতবেশি যন্ত্রণার ভার বয়তে পারে, জীবন পরিক্রমায় সেই ততবেশি সফলতা পায়।গর্ভধারণ করা, সন্তান জন্ম দেওয়া এবং সন্তান লালন পালন করার চেয়ে যন্ত্রণার অধ্যায় পৃথিবীতে আর হতে পারেনা। একজন নারীকে সেই অধ্যায়ের প্রতিটা পথ অতিক্রম করে যেতে হয়।জগতের সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় তো এখানেই।নারী সেই পথ অতিক্রম করতে গিয়ে প্রতিটা অধ্যায়কে এমনভাবে উপভোগ করে যেন এক একটি যন্ত্রণা তার কাছে একেকটি লাল গোলাপ!
গত সপ্তাহে সিরিয়ার যুদ্ধে যখন বোমা হামলা চলছিল, তখন এক নারী তার দশ বছরের ছেলেটিকে নিয়ে একটি বিল্ডিংয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরের নীচে লুকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ আগেই তার স্বামী মারা গেছে। ছেলেটি হাউমাউ করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।কিন্তু সেই নারীর চোখে জল নেই, নেই শোকের কোনো আবহ; কেননা সেই মুহূর্তে সেই নারীর যুদ্ধ থামেনি। তখনো সে অশ্রুকে চেপে রেখে তার সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল।এটাই হলো নারীর সৌন্দর্য।এই সৌন্দর্য কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে পাওয়া যায় না। নারীর এই সহিষ্ণু অধ্যায় কোনো বইপত্রেও লেখা থাকে না। নারী এখানেই অন্যন্যা।এক অনিন্দ্য সুন্দরের প্রতীক।আর এই সুন্দরের অর্থ কোনো দিবসের মাধ্যমে কোনোদিন প্রকাশ করা সম্ভব না।
লেখক: জহির রায়হান
লেখক ও নাট্য নির্মাতা।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। পাহাড়বার্তার -এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য পাহাড়বার্তা কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।