নিজেই স্বাবলম্বী শারীরিক প্রতিবন্ধী বান্দরবানের মানিক

NewsDetails_01

Bandarban-news-1-picবান্দরবান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম বালাঘাটার কামাল মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা মানিক। বান্দরবান পানি উন্নয়ণ বোর্ডের সাবেক চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারী বিনোদ চন্দ্র দাশের বড় ছেলে তিনি। তার আসল নাম মানিক চন্দ্র দাশ। এক সময় চাঁদের গাড়ী চালানো ছিল তার পেশা। ২০০৭সালের শেষের দিকে একদিন শৈপ্রপাতের বেইলী ব্রীজের পাশে খাদে পড়ে যায় তার গাড়ী। সেই দূর্ঘটনায় দুই পা নষ্ট হয়ে যায়। ঐদিন থেকে তার নতুন নাম হয় পঙ্গু মানিক। কিন্তু সকলের বোঝা হয়ে থাকতে রাজী নয় সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও হুইল চেয়ার নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে কাজের সন্ধানে। দীর্ঘ চেষ্টায় আজ সে স্বাবলম্বী। বালাঘাটা নিজ বাসার উঠোনে ছোট এক ফার্নিসারের দোকান দিয়েছে সে। এখন থেকে বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে ভাল ভাবেই কাটছে তার সংসার। পরিবারের ভরণ পোষন ছাড়াও শিক্ষা দিচ্ছেন নিজ ছেলে মেয়েদের। প্রতিবন্ধী হয়েও তার পরিশ্রম দেখে বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সকলেই খুশি তার উপর। তার পরিবারের লোকজনও তাকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করছে। এছাড়া তার এলাকায় কিছু বন্ধু রয়েছে। তারাও তাকে সবসময়ে সহযোগিতা করেন। মানিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমি একসময় গাড়ী চালাতাম। ২০০৭সালের শেষের দিকে গাড়ী নিয়ে বান্দরবান ফেরার পথে শৈলপ্রপাতের বেইলী ব্রীজের পাশে খাদে পড়ে যাই। সে দূর্ঘটনায় আমার দু’পা নষ্ট হয়ে গেলে আমি অনেকদিন কষ্ট পেয়েছি। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে কষ্টে পড়ে গেছে। আমি পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি ভেবে আমার আরো কষ্ট বেড়ে গেল। কাউকে মুখ দেখাতে পারছিলাম না। পরে পরিবারের সবার কষ্ট দেখে আমি নিজেই চিন্তা করতে লাগলাম কিছু একটা করার জন্য। পরিবারের খরচ চালানোর জন্য। অবশেষে একটি হুইল চেয়ার জোগাড় করে নিজেই কাজের সন্ধান করতে লাগলাম। প্রথমে হুইল চেয়ার নিয়ে বের হতে কষ্ট লাগত। একা বের হতে পারতামনা। একজনতে সাথে রাখতে হতো। কিন্তু বর্তমানে আমি একাই হুইল চেয়ার চালাতে পারি। বর্তমানে আমি টুকিটাকি কাঠের ফার্নিসারের ব্যবসা করছি। ফার্নিসার তৈরি করে বিক্রয় করছি। যা আয় হচ্ছে তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছি। সকলে আমাকে সহযোগিতা করছে। আমি যদি সরকারী সহযোগিতা পাই, ঠিক মত ব্যবসা করতে পারি তবে আমার জীবনকে আমি আরো উন্নত করতে পারব। এ ব্যাপারে তার সহযোগি রফিক বলেন, আমাদের মানিক ভাই অনেক কষ্ট করে আয় করে। সে আয়ের টাকা দিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। আমরাও মানিক ভাইকে সহযোগিতা করি। যতটুকু করতে পারি, ততটুকু করি। কারও কাছে মানিক ভাই হাত পাতেনা। টুকিটাকি ব্যবসা করে কোন রকম চলে। সরকারী সাহার্য্য পেলে সুন্দর ভাবে চলতে পারতো। বান্দরবান পানি উন্নয়ণ বোর্ডের সাবেক চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারী ও মানিকের বাবা বিনোদ চন্দ্র দাশ বলেন, মানিক আমার বড় ছেলে। সে প্রতিবন্ধী হলেও আমাদের জন্য পুরোপুরি বোঝা হয়ে যায়নি। সে ব্যবসা করলেও তা দিয়ে আমাদের পূর্ণাঙ্গ হচ্ছেনা। আমরাও তাকে যতটা পারি সহযোগিতা করি। সরকারী কোন সহযোগিতা সে পাচ্ছেনা। আমরা চাই সে যেন শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে সকল সুযোগ সুবিধা পায়। এবিষয়ে বান্দরবান শহর সমাজ সেবা প্রকল্পের কর্মকর্তা (অ:দা:) মিল্টন মুহুরী বলেন, সরকার সমাজ সেবার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ণ কার্যক্রম করে যাচ্ছে। প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ জরিপ, এসিড দগ্ধ ব্যক্তি, শারিরীক প্রতিবন্ধীদের পূর্ণবাসনের কার্যক্রম, শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা এ কার্যক্রমগুলো সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য করে থাকে। আমরা বিগত ২০১৩সালে প্রতিবন্ধীদের সনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচী করেছি। এ কর্মসূচীর আওতায় বান্দরবান পার্বত্য জেলার পৌর এলাকায় প্রাথমিক ভাবে ১৮৭জন পুরুষ এবং ১০৪ জন মহিলা সনাক্ত হয়েছে। এটি একটি অব্যাহত পক্রিয়া। প্রতিনিয়তই প্রতিবন্ধীরা আসছে এবং এটি ডাক্তার কর্তৃক সনাক্ত হবার পর ডাটা ব্যাংকে অর্ন্তভুক্ত করছি। বালাঘাটার মানিক চন্দ্র দাশ সে একজন প্রতিবন্ধী। তার বিষয়টা আলাদা। সে নিজেই স্বাবলম্বী এবং আমাদের একজন জরিপ ভুক্ত প্রতিবন্ধী। তার যদি কোন প্রকার সহায়তার প্রয়োজন হয়, সমাজ সেবা অধিদপ্তর হতে সে সহায়তা গ্রহন করতে পারবে, ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহন করতে পারবে, আমাদের জরিপেও অর্ন্তভুক্ত হয়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভাতার জন্য মনোনীত হয়েছে। তবে সরকারী সাহায্য সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধী মানিক আরো উন্নত জীবন যাপন করতে পারবে এমটা আশা করছেন তার পরিবার ও স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন