পার্বত্য তিন জেলায় (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) জাতীয় দিবসের কর্মসূচী নিয়ে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের মধ্যে ছিল দ্বন্দ। ছিল সমন্বয়হীনতা। সেই সমন্বয়হীনতায় ২০১৮ সাল থেকে জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেকার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। যার কারণে কর্মসূচি উদযাপন নিয়ে বিপাকে পড়েন সরকারি-বেসরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। তখন থেকে জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন করা হয় আলাদাভাবে। তবে সেই দ্বন্দ অচিরেই নিরসন হচ্ছে এমনটাই মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসনের সংযোগ অধিশাখার উপসচিব মো: শামসুল আলমের এক পত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পার্বত্য তিন জেলায় জাতীয় কর্মসূচী উদযাপন নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাঠপ্রশাসনের সংযোগ অধিশাখার উপসচিব মো: শামসুল আলমের স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জাতীয় কর্মসূচীসমূহ পালিত হলেও তিনটি পার্বত্য জেলায় হস্তান্তরিত দপ্তরের জাতীয় কর্মসূচীসমূহ যেমন- জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, কৃষি দিবস, সমবায় দিবস ইত্যাদি) জেলা পরিষদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু ভুলক্রমে জাতীয় কর্মসূচীসমূহ পালনের জন্য সকল জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়। এতে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়। এমতাবস্থায়, পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের জাতীয় কর্মসূচীসমূহ (জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, কৃষি দিবস, সমবায় দিবস ইত্যাদি) জেলা পরিষদের মাধ্যমে পালন করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিদের্শক্রমে অনুরোধ করা হলো ।
উপসচিবের স্বাক্ষরিত পত্রের অনুলিপি দেয়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর একান্ত সচিবকে।

এর আগে জাতীয় দিবসের কর্মসূচী পালন নিয়ে জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের দ্বন্দ নিরসনের জন্য এ বছরের ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে উপানুষ্ঠানিক পত্র দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং,এমপি।
উপানুষ্ঠানিক পত্রে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রায় এক দশমাংশ এলাকা জুড়ে অপার সম্ভাবনার পার্বত্য চট্টগ্রাম । এ অঞ্চলে বিশেষ ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয় । রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ যথাক্রমে ১৯৮৯ সনের ১৯নং, ২০ নং আইন ও বিধিমূলে পরিচালিত যা দেশের অন্যান্য জেলা পরিষদ বা অন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হতে সম্পূর্ণ ভিন্নতর ও তাৎপর্যপূর্ণ । এ পার্বত্য জেলাগুলোতে ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সহ অ উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বসবাস।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে উপানুষ্ঠানিক পত্রে আরো জানানো হয়, শান্তি চুক্তির আলোকে ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পষিদ আইন মোতাবেক সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যেমন: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, মাধ্যমিক শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদি বিভাগ ও বিভাগের কার্যাবলী পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। সে কারণে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহে হস্তান্তরিত বিভাগসমূহের জাতীয় কর্মসূচী (যেমন: জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, কৃষি দিবস ও সমবায় দিবস) জেলা পরিষদের মাধ্যমে উদযাপন এবং রাজস্ব ও উন্নয়ন বরাদ্দসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম‘‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” মতে পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক হওয়া বাঞ্চনীয় মর্মে জেলা পরিষদসমূহ দাবী করে । এর ব্যত্যয় হলে বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগের সাথে সমন্বয়হীনতা ও ভুল বুঝাবুঝির অবতারণা হয়।
এমতাবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের আইন ও বিধিমূলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ/দপ্তরসমূহ হস্তান্তরিত হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন জাতীয় কর্মসূচী পালনের বিষয়ে পার্বত্য জেলায় কর্মরত সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীগণকে সম্যক অবহিত ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা প্রদানের জন্য আপনার হস্তক্ষেপ/সুদৃষ্টি কামনা করছি।