পরিবার চলবে কেমন করে এখন ভেবে পাচ্ছি না কিছুই !

রুমার ৭০ মোটরসাইকেল চালকের দিনকাল

NewsDetails_01

মোটর সাইকেল চালিয়ে দৈনিক আয় হয় ৭শ থেকে ১২শ টাকা। দৈনিক চা-নাস্তা ও দু’ বেলা খাবারে চলে যায় প্রায় ৫শ টাকা। দিন শেষে সব খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে চার থেকে সাতশত টাকা। এটাকা-ই আমার পরিবার চলছিল। কিন্তু গত সোমবার থেকে লকডাউন-টানা সাতদিন, ফের ১৪ এপ্রিল থেকে কড়া লকডাউন। মটর সাইকেলে কোনো লোক নিয়ে চলাচল করা যায়না। এখন আমার আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবার চলবে কেমন করে ! এখন চিন্তা আর চিন্তা, ভেবে পাচ্ছি না কিছুই। এই কথা বলেছে রবিন বড়ুয়া।

গত মঙ্গলবার (৬মার্চ) সকাল ৯টার দিকে রুমা বাজারে মেমং দোকানে চা খেতে কথা হয়েছিল এ প্রতিবেদকের। তখন জানিয়েছিল এসব কথা। সে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে বড়ুয়া পাড়ার স্থায়ি বাসিন্দা।

প্রসঙ্গত; কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধে ৫মার্চ থেকে ১১মার্চ টানা সাতদিন সকল গণ পরিবহণ চলাচল নিষেধাজ্ঞাসহ বেশ কটি শর্ত আরোপ করে সারা দেশে নির্দেশিত নির্দেশনা মোতাবেক রুমা উপজেলায়ও লকডাউন শুরু হয়। শুরু দিন থেকে কঠোর কার্যকরের উদ্যোগ নেয়- উপজেলা প্রশাসন। এঅবস্থায় বিভিন্ন পেশায় দৈনিক আয় রোজগার করা মোটর সাইকেল চালকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এমন একজন চালক এই রবিন বড়ুয়াও।

রবিন জানায়, পরিবারে বিধবা মা’সহ সদস্য সংখ্যা-চারজন, বাবা মারা গেছেন। তাই ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মানুষের বাইক ভাড়া নিয়ে প্রথমে ভাড়া টানতাম দুই বছর। নিজের সামান্য জমানো টাকাসহ লোন নিয়ে পরে মোটর সাইকেল কিনছি। গত চার বছর ধরে মোটর সাইকেল চালিয়ে পরিবার চালাই আমি। এখন আবার শুরু হল লকডাউন। এটা আমার মাথা খারাপ করে দেয়।

কেন জানতে চাইলে রবিন আরো বলেন, গত বছর (২০২০) সালে লকডাউনের সময় বাইক ভাড়া টানতে পারিনি। এতে আমার অনেক ধারদেনা ছিল। পরিশোধ করতে করতে এখনো কিস্তিসহ নীট ৫০ হাজার বাকী। মায়ের ওষুধও কিনে দিতে হয় নিয়মিত। করোনার নামে লকডাউন আমার মতো অনেকের পরিবারকে তীব্র কষ্টে ঠেলে দিয়েছে ।

NewsDetails_03

এদিকে লকডাউনের কারণে ধার পরিশোধ ও সংসার চালাতে হচ্ছে আরেক বাইক চালক জনাচন্দ্র ত্রিপুরা(৪০)। সে রুমা সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের রয়েল পাড়া বাসিন্দা। পরিবারে সে ছাড়া স্ত্রীসহ তিন সদস্য আয়ের কোনো উৎস নেই। মেয়ে চট্টগ্রামে মিশনারি একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স্ক মাকে দেখাশোনা আর বাড়ির কাজ করে তার স্ত্রী। জনা ত্রিপুরা যাত্রী তুলে মোটর সাইকেলে করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছিয়ে দিয়ে দিনে যা আয় হয়, সেটি তার দৈনিক রোজগার।

সে জানায়, গত ১২ বছর ধরে বাইক চালিয়েছি, দিনগুলি তেমন খারাপ যাচ্ছিল না। বছর -দেড় বছর পর পর পুরানো বিক্রি করে নতুন বাইক নিতেন সে।

তবে গত বছর (২০২০) মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হবার পর তার সংসারে নেমে আসে অবর্ণনীয় সমস্যা, আর সবকিছুর ঘাটতি। ওই সময় সংসারে নিত্যদিনের ব্যয় মিটাতে শুরু করেন, জঙ্গলে গাছ কাটা শ্রমিক হিসেবে দিন মজুরি। অনভ্যস্থ শ্রমিকের কাঠ বহন করতে গিয়ে পিছলে মারাত্মক আহত হয়। সে সময়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোন নেয়া ধার এখনও মাসে ৪৮শত টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া গেল সপ্তাহে ব্র্যাক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। মোটরসাইকেল ভাড়া টেনে পরিশোধ করবার আশায় এসব লোন নিলাম। লকডাউন চলবে পুরো ৭দিন, ফের ১৪ তারিখ থেকে আরো কড়া লকডাউন শুরু হবে, বন্ধ রয়েছে আয় রোজগারও। কি মাথা ঠিক থাকবে, জনা ত্রিপুরার এমন প্রশ্ন- এপ্রতিবেদকের কাছে।

অন্যদিকে মোটর সাইকেল কল্যাণ সমিতি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিংনুঅং মারমা বলেন, রুমা উপজেলায় নিয়মিত মোটর বাইক ভাড়া চালিয়ে সংসার চালায় এমন ড্রাইভারের সংখ্যা ৭০ জনের বেশি। লকডাউনে সব ড্রাইভারের আয় বন্ধ হচ্ছে। তাদের সংসার কি হবে এখন। এবিষয়টি চিন্তা করে কিছুটা বাধা নিষেধ শিথিল করা উচিত প্রশাসনের।

রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, সরকারের ঘোষিত নির্দেশনা অনুযায়ি লকডাউনে নিয়মনীতি অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন