পানি দান করাই যার কাজ

আলীকদমের ওমর ফারুক

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা, যেখানে রয়েছে সারাবছরই পানির সংকট, আর এই সংকট নিরসনে নিজ অর্থায়নে এলাকাবাসীকে পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি। নি:স্বার্থভাবে এই মহামারীর দু:সময়ে সাধারণ জনগণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকাল-বিকেল পানি পৌঁছে দেওয়ায় ইতিমধ্যে ওমর ফারুক পানির দানবীর হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে।

রমজান মাসের শুরু থেকে এবং আলীকদমের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৫নং ওয়ার্ডের জনসাধারণের বাড়ী বাড়ী গিয়ে নিজ গাড়ী ব্যবহার করে প্রতিদিনই তিনি বিতরণ করছে প্রায় ৩০হাজার লিটার পানি।

সুত্রে জানা যায়, শুস্ক মৌসুম ছাড়াও বেশিরভাগ সময় আলীকদমে বেশিরভাগ এলাকায় মেলেনা সুপেয় পানি। পানির অভাবে এই রমজানে অনেক রোজাদারদের পোঁহাতে হচ্ছে চরম কষ্ট। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বেশ কয়েকটি রিংওয়েল এবং টিউবওয়েল বসানো হলেও চৈত্র মাস আসলে পানির স্তর নিচে নেমে শুকিয়ে যায় পানির উৎসগুলো আর এতে পানির চরম কষ্টে পরে এলাকাবাসী।

এদিকে জনগণের পানির কষ্ট নিবারণে এবার তাই আলীকদম পানবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক নিজস্ব পরিবহন নিয়ে প্রতিদিনই ৩০ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ পানির ট্যাংক নিয়ে সকাল বিকাল ২ বার করে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও মসজিদে পানি পৌঁছে দিচ্ছে সুপেয় পানি। উপজেলার যেখানেই পানির সংকট সেখানেই পানি সরবরাহ করছেন এই পানির দানবীর। এলাকার বিভিন্ন মসজিদে এই রমজানে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পানি সরবরাহের পাশাপাশি গরীব অসহায় পরিবারের বাড়ী বাড়ী গিয়ে কলসি আর বালতি ভর্তি করে দিয়ে মানবিকতার এক উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

NewsDetails_03

আলীকদমের পানবাজার, সিলেটি পাড়া,পাহাড়তলী পাড়া,আবু মাঝি পাড়া,কলারঝিরি পাড়া,আমতলী পাড়া, হাফেজের দোকান, আলী বাজার,পূর্ব পালং পাড়া, চম্পট পাড়া,আমতলী তঞ্চঙ্গ্যাঁ পাড়া,আশ্রয় ক্যাম্প এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণ তাই প্রতিদিনই ওমর ফারুকের পানির আশায় বসে থাকে, আর সময় হলেই তার গাড়ী এসে সারিবদ্ধভাবে সবাইকে পানি দিয়ে আবার চলে যায়।

আলীকদম পানবাজার এলাকার সুজন চৌধুরী বলেন, আমাদের পাড়ায় বেশিরভাগ টিউবওয়েল ও রিংওয়েলগুলো অকেজো হয়ে গেছে অনেক আগেই, যার কারণে গ্রীস্ম মৌসুম আসলে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও নিত্য দিনের ব্যবহার পানির জন্য আমরা কষ্টে পড়ে যাই, ওমর ফারুক ভাই তার নিজের অর্থ দিয়ে প্রতিদিন ২ বেলা আমাদের খাবার পানি ও ব্যবহারের পানি দিচ্ছেন ।

আলীকদম উত্তরপালং পাড়ার ইয়াছমিন আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের আশে পাশে কোন নদী-ছড়া না থাকার কারণে ৩০ মিনিট হেঁটে বিশুদ্ধ খাবার পানি আনতে হয় অনেক দূর হতে। প্রতিদিন গোসল করা, কাপড় ধোয়াসহ ব্যবহারের পানির জন্য আমাদের কষ্টের সীমা থাকে না। আমরা চাই সরকার আমাদের এলাকায় পানির কষ্ট দূর করুক।

ওমর ফারুক জানান,‘মানুষ মানুষের জন্য আর এই জিনিসটা আমি উপলব্দি করতে পারায় আলীকদম সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আমি প্রতিদিনই ৩০হাজার লিটার পানি সরবরাহ করে যাচ্ছি। রমজানের শুরু থেকে আমি এই কাজ করে যাচ্ছি”।

এদিকে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শমিষ্ঠা আচার্য্য বলেন,“ বান্দরবানের যে কয়েকটি উপজেলা রয়েছে, তার মধ্যে আলীকদম উপজেলায় পানির স্তর নিচে হওয়ায় বেশিরভাগ এলাকার টিউবওয়েল ও রিংওয়েলগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পানির সংকট নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়িত হলে আলীকদমে পানির সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

আরও পড়ুন