পাহাড়ে কনকনে শীত

ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। পথ ঘাট আর ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জমে এক টুকরো আলোতে জ্বল জ্বল করছে। সকালবেলায় কোন কৃষাণী শিতের পিঠা বানাতে চুলায় আগুন দিতে গিয়ে ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। কুয়াশা আর ধোঁয়ায় মিলে চারপাশ হয়ে উঠেছে ধোঁয়াশা। এদিকে গ্রামের কৃষকের গরুটি যাতে শীতে কাবু না হয় সে জন্য তার গায়ে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুরোনো কাপড় বা ছালার বস্তা।

গ্রামের পরিবেশেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে, বলছিলাম পর্যটন নগরী পাহাড়ী কন্যা খ্যাত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার কথা। বইয়ের পাতায় শরৎ কাল হলেও প্রছন্ড শীতে জবুথবু এ এলাকার মানুষ। বিকেল থেকেই কুয়াশায় মুখ ঢেকে যায় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মাঠঘাট, মেঠোপথ রাতভর টুপটাপ শব্দে ঝড়ছে। কুয়াশা কেটে দেরিতে উঁকি দিচ্ছে সকালের সূর্য। কথিত আছে অতি গাছপালায় নাকি শীত থাকে বেশি। তাই হয়তো গ্রামে শীত অনুভুত হয় বেশি। এদিকে চরম শীতেও বসে নেই কৃষক রা। কৃষকের কষ্টার্জিত সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। গত বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এ বছরেও বাম্পান ফলন হয়েছে।

এদিকে ধান কাটার পরপরই গ্রাম বাংলায় শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। বিলুপ্তপ্রায় খেজুরের মিষ্টি রসের পিন্নি, নবান্নের নতুন চালের পিঠা খেতে খেতে আড্ডা দেয়া এ যেন গ্রাম বাংলার চিরাচরিত প্রথা।
এদিকে তীব্র শীতে মাটিরাঙ্গা বাজারের একাধিক স্থানে বিক্রি হচ্ছে বাহারি রকমের শিতের পিঠা। বেশ আগ্রহভরে বিভিন্ন ধরনের ভর্তা দিয়ে পিঠা খাবার স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। এছাড়াও শীত থেকে বাঁচতে শরীরে গরম কাপড় জড়াতে কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। শীতের তীব্রতায় হতদরিদ্র ও অসহায় শীতার্ত মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছেন। সরকারি ও বে-সরকারি ভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ এখনো শুরু হয়নি।

NewsDetails_03

মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল হামিদ বলেন, শীত আমার প্রিয় ঋতু। গত কয়েকদিন ধরে এই স্থানে খুব কুয়াশা এবং তীব্র শীত অনুভুত হচ্ছে। শিতকাল টা অল্প সময়ের জন্য আমরা সেটা বেশ ভালো করেই উপভোগ করি। শীতকালীন বিভিন্ন শাক সব্জি, বাহারি রকমারি পিঠা পুলি পাহাড়ে বসবাসরত জনসাধারণের কাছে অত্যান্ত জনপ্রিয়।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিল্টন চাকমা বলেন, তীব্র শীতে সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথা, গলা ব্যথা, হাঁচি, অ্যাজমা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে তাই এসব রোগে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। একই সাথে শিশু ও বয়স্কদের গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। শরীরে শক্তি জোগায় এমন খাবার খেতে হবে। আর যে কোন জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, মাটিরাঙ্গায় কুয়াশা এবং তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ঠান্ডার প্রকোপ আরও তীব্রতর হবে।

আরও পড়ুন