পাহাড়ে কাউন চাষের সম্ভাবনা
অতিথি আপ্যায়নে, সামাজিক উৎসব-পার্বণে কাউনের পায়েশের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। কাউন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবার। পাহাড়ে ও সমতলে কাউন সমান জনপ্রিয়। আয়বর্ধনকমূলক এই চাষে পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পাহাড়ে কাউন চাষের ব্যাপক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগের অভাবে এ চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছেনা। পাহাড় ও সমতলের মানুষের কাছে কাউন পরিচিত একটি কৃষিপণ্য।
স্থানীয় জুমচাষী বারেক তঞ্চঙ্গ্যা জানান, পাহাড়ি ঢালু জমিতে জুমে ধান চাষের সাথে মিশ্রশস্য হিসেবে কাউন চাষ করা হয়। কাউন স্থানীয় তঞ্চঙ্গ্যাদের কাছে ‘কৈন চইল’ নামে পরিচিত। পাহাড়ে বৈশাখ মাসে জুমে ধানবীজ বোনার সময় কাউনবীজ ছিটানো হয়। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পর কাউনবীজ গজিয়ে ওঠে। জুমিয়াদের কাছে এটি এক প্রকার ধান হিসেবে পরিচিত। কাউন গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তিনি জানান, কাউন গাছ মাঝারি লম্বা, সবুজ রঙের পাতা, কাণ্ড শক্ত বিধায় সহজে নুয়ে পড়ে না। এর শীষ লম্বা, মোটা ও রোমশ প্রকৃতির হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সবধরণের মাটিতেই কাউনের আবাদ হয়। বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল ফলন হয়। জুমচাষীরা সাধারণতঃ এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢালু পাহাড়ে জুমচাষের সাথে কাউনের বীজ ছিটিয়ে আবাদ করে থাকেন। কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে চারা পরিচর্যায় সুবিধার পাশাপাশি ফলনও বেশী পাওয়া যায়। বীজ বুননের সময় সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখতে হয়।
জুমচাষী রুইরাং ম্রো জানান, প্রতিকেজি কাউন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয় বাজারে। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কাউন উৎপাদন হয় না, তবে বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জুমচাষে ধানের সাথে কাউনের মিশ্রচাষের ফলে আলাদা জমিরও প্রয়াজন হয় না। তাই খুব সহজেই কাউন চাষ করা যায়।
জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলার কৃষিবিদ মো সোহেল রানা জানান, সরকারি ভাবে চাষীদের বিনামূল্যে কাউন বীজ বিতরণের সুযোগ নেই। এ কৃষিপণ্যটি একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কৃষকরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাউন অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশে কাউনের চাল এক সময় মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা পূরণ করত। সময়ের ব্যবধানে সেই চালের চাষ কমে যাচ্ছে। কিন্ত এই চাল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি একটা শস্য। স্বাস্থ্যের এই দারুণ উপকারিতা এবং ডায়েটে অসাধারণ ভূমিকা পালন করার কারণে একে অনেক বর্তমান সময়ে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করে থাকে।