পাহাড়ে সকাল বেলার ঘন কুয়াশাসহ ইতিমধ্যে মৃদু মৃদু শীত বইতে শুরু করছে। এরইমধ্যে অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার কৃষকরা।
জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোর ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাছাড়া চলতি বছরের অতিবৃষ্টি ও সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা এখন ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকছেন। কিছুদিনের মধ্যে তাদের উৎপাদিত সবজি উঠবে বাজারে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় শীতকালীন শবজি ও মাঠ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এ লক্ষ্যে, ২০ জন কৃষকের মাঝে পেঁয়াজ বীজ ১ কেজি, ডিএপি সার ১০ কেজি, এমওপি সার ১০ কেজি, বালাই নাশক ও পলিনেট পেঁয়াজ প্রণোদনা দেয়া হয়।
রবি প্রণোদনায়, ভুট্রা বীজ ২ কেজি, ডিএপি সার ২০ কেজি, এমপিও সার ১০ কেজি, সরিষা, ১কেজি, ডিএপি সার ১০ কেজি, এমপিও সার ১০ কেজি, সূর্যমুখী ১ কেজি, ডিএপি সার ১০ কেজি, এমপিও সার ১০ কেজি, চীনাবাদাম ১০ কেজি, ডিএপি সার ১০ কেজি, এমপিও সার ৫ কেজি, অড়হর বীজ ২ কেজি, ডিএপি সার ৫কেজি, এমপিও সার ৫ কেজি করে পেয়েছেন ৭শত ৩০ জন কৃষক।
বসতবাড়ীতে শীতকালীন উফশী শবজি প্রণোদনা বিঘা প্রতি জমিতে সহায়তা দেয়া হয় ১২ টি জাতের ৮ পেকেট(১২৩০ গ্রাম) নগদ ১ হাজার টাকা সহ ৮শত কৃষককে সহায়তা প্রদান করা হয়।
এদিকে হাইব্রিড জাতের শীতকালীন প্রণোদনায় শীতকালীন শবজি বীজ ৪০ গ্রাম, ডিএপি সার ১০কেজি, এমপিও সার ১০ কেজি নগদ অর্থ ১হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রতিবছর এ উপজেলায় উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মেটানো হয়। তবে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করা হয় না বিধায় অনান্য স্থান থেকে শবজি এনে চাহিদা মেটাতে হয়। তবে মাটিরাঙ্গার চড়পাড়া, নতুন পাড়া, ১০ নং এলাকসহ গোমতী, তবলছড়ি, তাইন্দং এর বিভিন্ন স্থানে সবজি চাষ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষকদের মধ্যে কেউ জমি তৈরি করছেন। আবার কেউ জমিতে বীজ বা চারা রোপণ করছেন। কেউ আবার জমিতে গজিয়ে ওঠা সবজির চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। সব মিলিয়ে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেদিকে চোখ যায় শুধু দেখা মেলে শীতের সবজি চাষাবাদের দৃশ্য। সবজি ক্ষেত নিড়ানো, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দিতে ব্যস্ত কৃষক ও কৃষাণিরা। অনাগত ফসলের দিকে তাকিয়ে তাদের মুখে ফুটছে তৃপ্তির হাসি। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের আর্থিক লোকসান পুষিয়ে এবার ভাল ফলন আশা করছে কৃষকরা।
চড়পাড়ার কৃষক আব্দুর রব বলেন, আমি ১ একর জমিতে সারাবছর সবজি চাষ করি। এবার এসব জমিতে ফুলকপি, মরিচ, লাউ, শঁসা, টমেটো চাষ করেছি। ধান কাটা হয়ে যাবার পর আলু চাষ করবো, তবে এক টুকরো জমিতে আগাম আলু লাগানোর পরিকল্পনা করছি।
নতুন পাড়ার চাষি শহিদ মিয়া বলেন, আমি এবার ফুলকপি এবং টমেটো চাষ করেছি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে শীতকালীন সবজি আবাদ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে আমি প্রতি বছরই সবজি চাষ করি। শীতকালে বাজারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা থাকায় লাভবান হওয়া যায়। তবে এবার টমেটো চাষে বেশ লোকসান গুনতে হয়েছে। গাছগুলো ঝিমিয়ে মরে যাচ্ছে।
শবজি চাষী ধনা মিয়া বলেন, আমি এক খন্ড জমিতে সব সময় শবজি চাষ করে থাকি। এবার মুলা এবং মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। আমাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে ওঠার পরই কমে যাবে সবজির দাম। একই সঙ্গে বাজারে সবজির সংকটও কেটে যাবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, সাম্প্রতিক সৃষ্ট বন্যায় শবজি চাষে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয় এরই জন্য ক্ষতি পোষাতে মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিস ৩হাজার ৫০ জন কৃষকের মাঝে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে রাসায়নিক সার, বীজ ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও মাটিরাঙ্গায় সবজির বাম্পার ফলন হবে। এতে বাজারে সবজির সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।