পাহাড়বার্তা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল

NewsDetails_01

সবুজ পাহাড় আর মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সমৃদ্ধ তিন পার্বত্য জেলা । একসময় এখানে মোবাইল ফোনে কথা বলাটা ছিলো কল্পনার বাইরে, এখন সেখানে প্রযুক্তি আলো ছড়িয়েছে । ২০০৮ সালে পার্বত্য জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুর পরেই পরিবর্তন আসে প্রযুক্তির ব্যবহারে। ইন্টারনেটের কল্যানে পাহাড়ের মানুষ এক মুহূর্তেই জানতে পারছে দেশ-বিদেশের ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা । প্রযুক্তির সুবাধে সেই চিরচেনা পার্বত্য জেলায় এসেছে অমূল পরিবর্তন । সমতলে প্রকাশিত অনলাইন মিডিয়ার সাথে তাল মিলাচ্ছে পাহাড়ের অনলাইন পোর্টালগুলো ।

►পাহাড়ের সংবাদ মাধ্যম :
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪.কম । এরপর থেকে দেশে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালের যাত্রা শুরু হয় । তবে সময়ের ধারাবাহিকতায় ব্যতিক্রম হয়নি তিন পার্বত্য জেলায় (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি)। ২০০৮ সালে সাংবাদিক ফরিদুল আলম সুমনের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে পার্বত্য জেলার প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টল সিএইচটি ডটনেট। একই বছরের অক্টোবর মাসে অনলাইন পোর্টালটি অনানুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও, কয়েক মাস অতিক্রম হওয়ার পর অনলাইন পোর্টালটি বন্ধ হয়ে যায়। আর এই স্বপ্ন যাত্রায় ছিলেন, বান্দরবান জেলার সাংবাদিক ফরিদুল আলম সুমন এবং এস বাসু দাশ, রাঙামাটি জেলার সাংবাদিক ফজলে এলাহী ও খাগড়াছড়ি জেলার সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী। এরপর পার্বত্য জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক পোর্টালের যাত্রা শুরু হলেও আর্থিক সংকটের কারণে বর্তমানে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে নিউজ পোর্টালগুলো।

বর্তমানে পার্বত্য জেলার অনলাইন পত্রিকাগুলোর মধ্যে পাঠক বেশি রাঙামাটি জেলার অনলাইন পোর্টাল পাহাড় ২৪ এবং সিএইচটি টুডে । সেক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালগুলো। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, বস্তুনিষ্ট সংবাদ কম সময়ে প্রকাশ করা একটি অনলাইন পোর্টালের প্রাণ। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে খানিকটা পিছিয়ে আছে পাহাড়ের পোর্টালগুলো।

২০১৫ সালের ২৯ শে জানুয়ারি বান্দরবান থেকে লুৎফুর রহমান (উজ্জ্বল) এর সম্পাদনায় সিএইচটি টাইমস ডটকম চালু হলেও শুরুতে পোর্টালটি অনেক এগিয়ে যায়, তবে কিছুদিন বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশনের কারনে পোর্টালটি সংবাদের বিশ্বাস যোগ্যতা ও সংবাদ পরিবেশনা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পাঠক মহলে। তবে সেই সংকট কাটিয়ে পোর্টালটি ফিরেছে নতুন ধারায়।

দৈনিক আজকের কাগজ এর সাবেক প্রতিনিধি সাংবাদিক সাদেক হোসেন চৌধুরীর সম্পাদনায় ও আমার পরিকল্পনায় ২০১৬ সালের ১২ই আগস্ট পাহাড়বার্তা ডট কম এর ডোমেইন নেওয়া হয় । পরে স্থানীয় খবরকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছয়মাস পর্যন্ত পরীক্ষামূলক সম্প্রচার থাকে পোর্টালটি । আর পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোর্টালটিতে নিত্য নতুন সংবাদে ভরপুর করে ২০১৭ সালের ১১ ই আগস্ট পোর্টালটি পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে আসে । বৈচিত্রতায় ভরপুর আর নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের কারনে অল্প সময়ে পাঠকের মন জয় করে নেয় পাহাড়বার্তা। তবে সাধারণ পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারলেও দক্ষ জনবলসহ বিভিন্ন কারণে কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি পোর্টালটি ।

অন্যদিকে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে সাংবাদিক ফরিদুল আলমের সম্পাদনায় খোলা চোখ ডটকম এর পরীক্ষামূলক সংস্করণের কাজ শুরু হয়, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে। যাত্রা শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঝিমিয়ে পড়লেও পোর্টালটি এখন ভিডিও নির্ভর সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে আলোচনায় আসে। তবে দক্ষ জনবলের অভাবে তাদের সংবাদ পরিবেশন অনেকটা অনিয়মিত। বান্দরবানসহ পার্বত্য জেলার সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে। এছাড়াও এই বছরে বান্দরবান প্রতিদিন, চেতনা নিউজ, পূর্ব সীমান্ত, আলোকিত পর্বতসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল চালু হলেও তারা এখনো সংবাদ পরিবেশন করে পাঠকের আলোচনায় আসতে পারেনি। তবে আমার বিশ্বাস,পাহাড়ের অন্যান্য জনপ্রিয় পোর্টালগুলোর মত নানা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে তারাও তাদের অবস্থান গড়ে তুলবে।

NewsDetails_03

►সীমাবদ্ধতার গোলকে আটকে যাচ্ছে পাহাড়ের অনলাইন পোর্টাল :
তবে পার্বত্য জেলায় মানসম্মত অনলাইন নিউজ পোর্টলগুলোতে আছে শূন্যতা। সংবাদের পেশাদারিত্ব, দক্ষ সংবাদকর্মীর অভাব, বিজ্ঞাপনের অপ্রতুলতা আর অর্থনৈতিক সংকট বিদ্যমান আছে পোর্টালে। যার কারণে পাঠকের কাছে সংবাদ পরিবেশনে পিছিয়ে পড়ছে পাহাড়ের অনলাইন সংবাদম মাধ্যমগুলো। এক্ষেত্রে একমত পোষণ করেন মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা । এছাড়াও একটি অনলাইন পত্রিকার পাঠক যেখানে একটি ভালো সংবাদ পড়ে দেখার পর শেয়ার ও লাইক পর্যন্ত করা থেকে বিরত থাকে, সেখানে বান্দরবানের অনলাইনগুলো র‌্যাংকিং থেকে পিছিয়ে পরে, সেই ধারণা আমারসহ অন্য সংবাদকর্মীদের।

বর্তমানে আমাদের দেশের অনলাইন নিউজ পোর্টালের পাঠক সংখ্যার ৭০ ভাগই তরুণ-তরুণী । তবে তিন পার্বত্য জেলার পাঠকসংখ্যা সেই হিসাবে অনেক কম। অনেকসময় নিউজ পোর্টালগুলো নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে এই তরুণ-তরুণীদের ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে । সেই অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য অশ্লীলতামুক্ত নিউজ পোর্টালগুলোর দিকেই লক্ষ্য রাখতে হবে তরুণ প্রজন্মের। একই সঙ্গে ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজ ছাড়া অন্য পেইজগুলো থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ না করার ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিতে হবে নিউজ পোর্টাল সংশ্লিষ্টদের।

►সংবাদের খোঁজে পাঠক ঝুঁকছে সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন পোর্টালে :
ইন্টারনেট ব্যবস্থার সহজলভ্যতার কারণে পাঠক এখন প্রিন্টেড পত্রিকার চেয়ে ঝুঁকছে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর দিকে। ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ আর অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোতে প্রিন্টেড পত্রিকায় আগ্রহ হারিয়েছি পাঠক। তাই পাঠকের চাহিদার কথা স্মরণে রেখে শত বছরের অনেক পুরোনো নামকরা

পত্রিকাগুলো তাদের প্রিন্টেড পত্রিকা বাদ দিয়ে অনলাইন পত্রিকায় হাত বাড়িয়েছে । দ্রুত সময়ে সংবাদ পাওয়ায় উন্নত দেশগুলোতে অনলাইন পত্রিকার চাহিদা অনেক বেশি । আর পার্বত্য জেলার মানুষ টুইটার, ব্লগ এর সাথে খুব একটা পরিচিত নয় এখনও। সংবাদ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বলা যায়, সংবাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি কিন্তু সংবাদ পড়া ও জানার মাধ্যম পাল্টে যাচ্ছে। তাই অনলাইন সাংবাদিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর কর্ণধারদের আরো গতিশীল হতে হবে । সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন আইডিয়ার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

►যাচাই করুণ সংবাদ মাধ্যম :
প্রতিদিন নতুন অনলাইন পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটছে দেশে। সাইটের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য বেশিরভাগ নতুন অনলাইন পত্রিকাগুলো অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ থাকে । প্রতিদিনই যৌনতা নির্ভর, গুজব নির্ভর এমনকি বিকৃত ছবি দিয়ে খবর প্রকাশ করছে পোর্টালগুলো। কোন নিউজ পোর্টালগুলো আপনার জন্য উপযোগী, আর কোন নিউজগুলো আপনার আর সমাজের জন্য ক্ষতিকর সেটি বেছে নেয়া একজন পাঠক হিসেবে আপনার দায়িত্ব । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার একটা ভুল সংবাদ শেয়ারে ক্ষতি হতে পারে আপনার বন্ধু,পরিবার, সমাজ আর দেশ এর ।

এস বাসু দাশ: নির্বাহী সম্পাদক,পাহাড়বার্তা
ই-মেইল [email protected]

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। পাহাড়বার্তার -এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য পাহাড়বার্তা কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না