পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক অনটন নিরসনে ঝাড়ু ফুলের কদর বেড়েছে

NewsDetails_01

বাসা-বাড়ি ও আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজে জুড়ি নেই পাহাড়ে জন্মানো ঝাড়ু ফুলের (প্রকাশ উলফুল)। শীতের ভরা মৌসুমে পাহাড়ি অঞ্চলে ঝাড়ু ফুল ফোটার পূর্ণাঙ্গ সময়। পাহাড়ি পণ্যে জীবিকা নির্বাহকারীরা এ সময়ে পাহাড় থেকে হাটে পাহাড়ি ঝাড়ু ফুল আনতে শুরু করেছেন অনেকে।

ঝাড়ু ফুল গৃহস্থালির পরিচ্ছতার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্রাম থেকে শহরে এমনকি বিত্তবান ঘরে এই ঝাড়ু ফুল আঁটি বেঁধে সংরক্ষণ করা হয়। কারণ পরিচ্ছন্নতার যত আধুনিক ও বিকল্প পণ্য থাকুক না কেন, ঝাড়ু ফুলের বিকল্প নেই। এ ফুলের কদর বেশি।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ঝাড়ু ফুল স্থানীয় হাট-বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে ঢাকা- চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আর এ ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের নারী-পুরুষরা। এছাড়াও গহীন পাহাড় থেকে এ ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছেন ঝাড়ু ফুল সংগ্রহকারীরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মাটিরাংগা উপজেলার রসুলপুর এলাকা হয়ে আটবাড়ি সহ কালা পাহাড় এলাকা থেকে এতদঅঞ্চলের পাহাড়ী জনগোষ্ঠীগণ ঝাড়ু ফুল সংগ্রহ করে। অতি দূর্গম এলাকা হবার দরুন বেশির ভাগ তারাই এসব ফুল সংগ্রহে কাজ করে থাকেন। কালা পাহাড় সহ মাটিরাংগার বিভিন্ন স্থান থেকে এসব উলফুল সংগ্রহ করে পাহাড়ি-বাঙ্গালি নিম্ন আয়ের নারী-পুরুষরা। পাহাড়ের বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা উলু ফুলের আঁটি বানিয়ে ঝাড়ু হিসেবে মাটিরাংগা ও গুইমারার সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করে শ্রমজীবি মানুষরা।

জানা যায়, ২০ /৩০ শলাকা ফুল দিয়ে একটি আটি বাঁধা হয়। প্রতিটি আটি আকার ও মানভেদে ২০/২৫ টাকা বিক্রি করা হয়। এক বান্ডিল ফুলে ৫০/১০০ টি আটি থাকে। প্রতিটি বান্ডিল ১হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। মানভেদে এর দাম কমবেশি হতে পারে।

পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারের নারীরাও জুমচাষের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে পাহাড় থেকে ফুল ঝাড়ু সংগ্রহ করে নিয়মিতস্থানীয় বাজারগুলোতে বিক্রি করে। স্থানীয় পাহাড়ি নারীরা সংসারে বাড়তি আয়ের পথ হিসেবে এটিকে বেছে নিয়েছে পুরোদমে।

NewsDetails_03

মাটিরাংগার আনাই ত্রিপুরা বলেন,পাহাড়ের বিভিন্ন স্থান থেকে উল ফুল কেটে আঁটি তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের শনিবার মাটিরাংগা বাজারে বিক্রি করি।

কাঁচা ফুলের ২০টি শলাকা দিয়ে তৈরি করা হয় এক একটি ঝাড়ুর আঁটি। প্রতিটি আঁটি আকারও মানভেদে ২০ টাকা করে বিক্রি করি। আমি প্রতি সাপ্তাহে ৫০টি আটি ঝাড়ু বিক্রি সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকি ১হাজার টাকায়। এটি আমার পরিবারের বাড়তি আয়।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে ঝাড়ু ফুল কিনে রোদে শুকিয়ে ঝড়ুর আঁটি বানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে সরবরাহ করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এগুলোকে রোদে ভালভাবে শুকিয়ে ঝাড়ু দেবার মতো সম্পুর্ণ উপযুক্ত করে বাঁধা হয়। এরপর ঝাড়ুফুল গুলোকে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমজীবী মানুষ পাহাড় থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত উল ফুলের শলাকা কেটে সংগ্রহ করে করতে পারে।

ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ীরা রাসেল জানান, দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের নিম্ন আয়ের লোকজনদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম-ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি করেন।

পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হওয়া ঝাড়ু ফুল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রাকৃতিক এই ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঝাড়ু ফুলের আবাদ করা হলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো উলফুল ঝাড়ু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ অঞ্চলে পিছিয়ে পরা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুন