পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে বান্দরবান এখন উৎসবের শহর। স্থানীয় মারমা’রা তাদের ভাষায় একে বলে ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ‘।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায় অধ্যুষিত বান্দরবানে প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যোয়াই উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলার ৭ উপজেলায় নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আদিবাসী অন্যান্য সম্প্রদায়গুলোর পল্লীতেও চলছে নানা আয়োজন। মাহা ওয়াগ্যোয়াই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হাজারো ফানুস ওড়ানো ও রথটানা। রথে জ্বালানো হয় হাজার হাজার বাতি, দান করা হয় নগদ অর্থ। রং- বেরঙ্গের ফানুসবাতির ঝলকানিতে রঙ্গিন হয়ে উঠে সবুজ পাহাড়ের রাতের আকাশ। এজন্যে স্থানীয় ক্যাং বা বিহারগুলোকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। এখন থেকে রাতে আলোর ঝলকানিতে জানান দিচ্ছে পাহাড়ের বড় উৎসব আয়োজনটি এখন সন্নিকটে।
এ উৎসবে ঘরে ঘরে রাত জেগে আদিবাসী তরুন-তরুনীরা বৈচিত্রময় নানা ধরনের পিঠাপুলি তৈরির কাজ করেন। এক অন্যের ঘরে চলতে থাকে আপ্যায়নের পালা। আর এখন থেকে তরুণ-তরুণীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে মারমা পল্লীগুলো। উৎসবকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের শেষ সময়ের পুরোদমে কেনাকাটায় ব্যস্ততা বেড়ে গেছে স্থানীয় দোকানীদেরও।
অন্যদিকে জেলার বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়া সম্প্রদায় ও তাদের মতো করে প্রবারণা উৎযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ওয়াগ্যোয়াই উৎসবকে ঘিরে ৮ অক্টোবর থেকে ১১ অক্টোবর শহরের পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে আয়োজন করা হয়েছে চারদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্টান, ছোয়াইং দান, বিশেষ প্রার্থনা, বর্ণাঢ্য রথযাত্রা ও রথ উৎসর্গসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
বান্দরবান ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ‘ উৎযাপন কমিঠির সাধারন সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো ওয়াগ্যোয়াই পালনের জন্য ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পর্ন করা হয়েছে।
মারমা সম্প্রদায়ের আদিবাসী তরুন-তরুনীরা বিভিন্ন ধরনের মুখোশ পরে এই গান গেয়ে ও নেচে বিশাল আকারের রথ টেনে নিয়ে যায় মনের আনন্দে। একই সাথে উড়ানো হবে হাজার হাজার ফানুস। আদিবাসীদের ঘরে ঘরে তৈরি হবে ভিন্নধর্মী পিঠা-পুলি।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, প্রবারনা উৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে পালনের লক্ষ্যে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
১০ অক্টোবর মধ্যরাতে শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীতে রথ উৎসর্গ করা হবে এবং স্থানীয় বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ধর্মীয় আলোচনা ও নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসবের ইতি টানা হবে। উক্ত অনুষ্টানগুলোতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, রিজিয়ন কমান্ডার, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আদিবাসী নেতৃবৃন্দ।
এই ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, প্রবারণা উপলক্ষ্যে জেলার ১৪০টি বৌদ্ধ বিহারে ত্রাণকার্য (চাল) এর ডিও বিতরণ করা হয়েছে।
আদিবাসীদের এই উৎসবের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অংশ ফানুস ওড়ানো ও রথযাত্রা দেখতে প্রতি বছরের মত এবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরাও এসে ভিড় করছেন এখন থেকে বান্দরবানে। এই উৎসবকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যাবেন।