পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে বিস্তৃত ফসলের মাঠে খণ্ড খণ্ড হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। ফসলের মাঠে হলুদ সরিষার এমন দৃশ্য দেখা যায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। যেখানে সরিষার বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ থাকার জন্য যতটুকু সম্ভব খাদ্যে উৎপাদনে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় অত্র উপজেলায় সরিষার আবাদে ঝুকছে কৃষক। অপরদিকে তেলের মূল্য বেশি হবার দরুন সরিষার আবাদে বেশ ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষক।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়া এলাকায়সহ উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলের জমিতে এক থেকে দুটি ফসলের বেশি আবাদ হতো না। সরকারের কৃষিবান্ধব নানা পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে এই উপজেলার জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল। আমন কাটার পর পরে থাকা জমিগুলোতে আবাদ হচ্ছে সরিষা। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।
সরিষা মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন বাদেই ঘরে উঠবে সরিষা। বছরখানেক আগেও পানি সংকটসহ নানা কারণে বোরো ধান কাটার পর দীর্ঘ সময় পড়ে থাকত পাহাড়ী অঞ্চলের এসব জমি। তবে এখন পড়ে থাকা সেসব জমিতে এখন চাষ হচ্ছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের সরিষা।
উপজেলার গোমতী ইউনিয়নের বান্দরছড়ায় ১শ শতক জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন কৃষক রফিকুল। তিনি বলেন, আগে এই জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম পরিত্যাক্ত হিসেবে এই জমি পড়ে থাকতো। পরে মাটিরাঙ্গা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় আমি এই জমিতে সরিষার চাষ করি। এই জমিতে আমার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরছ হয়েছে। যদি ভাল ফসল হয় তাহলে ১লাখ টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবো।
অপর কৃষক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে শ্রদ্ধা রেখে আমি ও ১শ শতক জমিতে শরিষার আবার করি। উপজেলা কৃষি অফিস আমারে বিনামূল্যে শরিষার বীজ ও সার সরবরাহ করে। ফলন ভাল হলে আমি এবার বেশ লাভবান হবো।
উপজেলার আরেক কৃষক বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধানের চাষ করব।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হেক্টর জমি। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১৫ হেক্টর জপাহাড়ের মাটি, সমি। এ প্রেক্ষিতে এবার ৮৫০ জন কৃষকের মাঝে বিভিন্ন পেকেজের আওতায় বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উপজেলার ১১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। অনেক জায়গায় বাম্পার ফলন ও হয়েছে।
কৃষি অফিস আরো জানান, সরিষা চাষে কম পরিশ্রম ও কম খরছে বেশ লাভবান হতে পারে কৃষক। ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে খরছ হয় ৩হাজার ৫শত টাকা। সে ক্ষেত্রে কৃষক যদি ১মণ সরিষা ৪ হাজার টাকা বিক্রি করেন। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ১বিঘা জমিতে ২০ টাকার সরিষার বিক্রি করা যায়। খরছ বাদ দিলে একই বিঘা জমিতে লাভ হয় ১৬ হাজার টাকা। এতে করে ভোজ্য তেলের ক্রাইসিস কমে যাবে এবং সরকারের লক্ষমাত্রা পতিত জমির ব্যাবহার অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলেন, ভোজ্যতেলের জোগান দিতে এবং আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে এসব সরিষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই সরিষা আবাদ আরো বাড়াতে হবে আর সচেতনতা বাড়াতে উদ্যেগ নিতে হবে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরনের সহায়তা করা হয়েছে। সরকার এবং পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে বিনামূল্য প্রাপ্ত বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষক এসব পেয়ে পতিত জমি চাষ করার আগ্রহ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে। কৃষক যদি কাঙ্খিত ফসল পায় তাহলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
এছাড়াও চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সরিষা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আমন ধানের চাষ বেশি হয়। আর আমর ধানের পর পরই বোরো ধানের চাষ হয়। পানির অভাবে বোরো ধান করা হয় না। ফলে সেসব জমি সাময়িক পতিত থাকে। সরকারের এজেন্ডা অনুয়ায়ী সাময়িক পতিত জমিতে যদি সরিষার আবার করা হয় সেক্ষেত্রে কৃষকরা একটা বড় ধরণের লাভ হতে পারে।
আর তাই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।