পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমার বক্তব্যে পাহাড় জুঁড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকে কয়েকদিন ধরে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে। চলমান আন্দোলন ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা মুঠোফোনে বলেন, বক্তব্য ভাল করে শুনলে দেখবেন আমি সে সময়ের(শান্তি চুক্তি পূর্ববর্তী) কথা বলেছিলাম। প্রত্যেকটি মানুষের সাফল্যের পেছনে অনেক দুঃখ কষ্ট থাকে। সেগুলো ভুলে গেলে কি হয়? পাহাড়ের মানুষ যেন আমাকে ভুল না বুঝে। আমার কাছে পাহাড়ী বাঙালী কোন বিভেদ নেই। আমার পরিবারের সদস্যরা আমার কাছে যেমন, এলাকার মানুষেরা আমার কাছে তেমন। আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চায়।
গত সোমবার খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা ও রামগড়,বান্দরবানের সদর উপজেলা, লামা, আলীকদম ও রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় বাসন্তী চাকমার অপসারণ, বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদসহ সাধারণ জনগণ।
মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও মাটিরাঙা পৌর মেয়র শামছুল হক, সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিরণ জয় ত্রিপুরা ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মজিদ।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামছুল হক তার বক্তব্যে বলেন, বাসন্তী চাকমা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটি রাষ্ট্রদ্রোহীতার সামিল। তার এ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি শপথ ভঙ্গের দায়ে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করা দরকার। আর বাসন্তী চাকমার বক্তব্য তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। এর সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন সর্ম্পক নেই।
পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, জাতীয় সংসদে দাড়িঁয়ে বাসন্তী চাকমা যে বক্তব্য দিয়েছে তার সাথে পাহাড়ী আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মতার্দশের মিল রয়েছে। আওয়ামীলীগের ব্যানার ব্যবহার করে বাসন্তী চাকমা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। পাহাড়ি বাঙালীর সহাবস্থান নষ্ট করে পাহাড় আবারও অস্থিতিশীল করে তুলতে কুচক্রী মহল তৎপরতা চালাচ্ছে। বাসন্তী চাকমা তাদের একজন। তাই অনতিবিলম্বে বাসন্তী চাকমার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীদের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে মাটিরাঙা মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে বাসন্তী চাকমার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বির্তকিত বক্তব্য রাখার প্রতিবাদে রামগড়ে সচেতন উপজেলাবাসীর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রামগড় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাসন্তী চাকমাকে অপহরণ করা না হলে পাহাড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ রামগড় উপজেলা শাখার আহবায়ক মো: সাইফুল।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পার্বত্য শান্তি চুক্তি পূর্ববতী সময়ে পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ও পাহাড়ের অংশীজনদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বির্তকের জন্ম দেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা।