পাহাড়ে আনন্দ শূন্য ঈদ : ঈদের কেনাকাটা হলোনা শিশু রোহানের

NewsDetails_01

রাঙামাটির বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় একের পর এক লাশ
প্রাকৃতিক দুর্যোগে লন্ডভন্ড হয়ে আছে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা, যেদিকে চোখ যায় শুধু ধ্বংসলীলা। পাহাড় ধস,রাস্তা ধস,ভেঙ্গে পড়েছে সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত ৯ দিনেও সর্বত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। প্রাকৃতিক তান্ডবে পাহাড় থেকে ১২০ টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সহস্রাধিক। কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা এখন ও সম্ভব হয়নি।
এই ধ্বংসের মধ্যেও মুসলমানদের বড় উৎসব ঈদ উল ফিতর দৌঁড় গোড়ায় এসে হাজির। অন্যান্য সময় এ রকম ঈদের সময় পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের কেনাকাটায় ধুম পড়তো। মুসলমানদের ঈদ হলে ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতেন না। তারা ও পছন্দের জামা কাপড় কিনে ঈদের দিন পরিচিতজনদের বাসায় ঘুরে বেড়াতেন। তবে এবার সব কিছু স্বপ্ন হয়ে গেছে। ঈদের আনন্দ পাহাড় থেকে হারিয়ে গেছে।
পার্বত্য এলাকার বড়বাজার গুলোতে ঈদের কেনাকাটা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীরা নতুন কোন পসরা সাজাতে পারছে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড় যেন অন্ধকার ডুবে গেছে। কারো মুখে হাসি নেই কোথাও আনন্দ নেই। আর উৎসব ! যাদের বেঁচে থাকা এখন দায় তাদের আবার উৎসব,সব স্বপ্ন হারিয়ে তারা এখন কোন ভাবে বাঁচতে চান।
কাপ্তাই উপজেলার ছোট্ট রোহান (৬) দুর্ঘটনার ৩ দিন আগে তার বাবার কাছে বায়না ধরেছিল ঈদের জামা কিনতে সে এবার চট্টগ্রাম যাবে। বাবা মো সবুজ মিয়া রাজি হয়ে যান কিন্তু রোহানের আবদার মা রুবিনাকে সাথে নিতে হবে। বাবা সবুজ মিয়া রাজি হয়ে যান। ছোট্ট রোহানের আবদার মেটাতে দাদু নুরনবী(৬৫) কে নিয়ে চট্টগ্রাম যাবে। বাবা সবুজ তাতে রাজি। কথা ছিল গত ১৬ জুন শুক্রবার সবাই মিলে চট্টগ্রাম যাবে। কিন্তু ১৩ জুনের প্রলয়ঙ্কারি ঝড়,তুফান এবং পাহাড় ধস সব ধ্বংস করে দিয়েছে। মাটিচাপা পড়ে রোহান, তার মা রুবিনা,রোহানদের দাদু নুরনবী সবাই একসাথে মৃত্যুবরণ করে। সবুজ মিয়া সেদিন কর্মস্থলে থাকায় কোন ভাবে প্রাণে বেঁচে যায়। কিন্তু প্রাণে বাঁচলে ও তার সবকিছু শেষ হয়ে যায়। সবুজের মতো কাপ্তাই এর পাহাড়ধসে মৃত অনেক পরিবারের থেকেও ঈদ হারিয়ে গেছে। একইভাবে কাপ্তাই এ পাহাড় ধসে আহত ব্যাক্তি এবং ঘরবাড়ি হারোনো লোকজনের থেকে ঈদ আনন্দ হারিয়ে গেছে।
কাপ্তাই পাহাড় ধসে মৃত আবুল হোসেন,রোকসানা বেগম, রমজান আলীসহ আরো অনেক পরিবারের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঈদের আনন্দ নয় কিভাবে বেঁচে থাকবো কোথায় মাথা গুজাবো সেই চিন্তায় আমরা অস্থির।
কাপ্তাই উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, মৃত পরিবারের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তিগতভাবে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পাহাড় ধসে ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোকে ঘর তোলার ব্যাপারে সকলে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। ঈদের দিন মৃত পরিবারদের একটু শান্তনা দিলে ঐ পরিবারের হয়তো কিছুটা সান্তনা পাবে।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, কাপ্তাই নৌ বাহিনী স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কাউটস লিডার এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন এবারের ঈদটা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য বেদনাদায়ক। সমাজের সকল বিত্তবান লোকরা এগিয়ে আসলে হয়তোবা তারা এই ঈদে প্রিয়জনদের সাথে একটু ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে।

আরও পড়ুন