পাহাড়ে বড় চাকমা’র ব্যতিক্রমী কুকুরের খামার

NewsDetails_01

ব্যতিক্রম ও ভিন্নধর্মী উদ্দ্যেগ নিয়ে কুকুরের খামার গড়ে তোলে পাহাড়ে আশার আলো দেখাচ্ছেন রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বড় চাকমা নামে। আর এ নিয়ে এস বাসু দাশ ও সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা’র বিশেষ প্রতিবেদন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রুপকারি ইউনিয়নে মগবান গ্রামে এই খামারটি গড়ে তুলেন তিনি। এই খামারে ছয় প্রজাতির ছোট-বড় ২৬ টি কুকুর রয়েছে। শখের বশে করা এই খামারটি নাম রেখেছেন চাকমা ক্যানেল এন্ড এগ্রো ফার্ম। কুকুর ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণী পোষার কারণে তিনি এই নামটি রাখেন।

আরো জানা গেছে, এই ব্যতিক্রমি উদ্দ্যেগটা বড় চাকমা’র, ছোট কাল থেকে প্রভুভক্ত কুকুরের প্রতি ভীষণ দুর্বলতা ছিল তার। তখন থেকে শখের বশে কুকুর পোষা শুরুর চিন্তা করেন। শুরুতে কয়েকটি কুকুর নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করলেও তার এই শখের বশের পোষা কুকুর ধীরে ধীরে খামারের রুপ ধারণ করে।

NewsDetails_03

চাকমা ক্যানেল এন্ড এগ্রো ফার্ম কুকুর এর কর্ণধার বড় চাকমা পাহাড় বার্তাকে বলেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে কুকুরের খামারের কাজ শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে খামারটি বড় করি। এর পাশাপাশি ছাগল, দেশি মোরগ ও বন মোরগ, শুকুর, টার্কি পালন করছি।

খামারে বিদেশী কুকুর

আরো জানা যায়, শখের এই চাকমা ক্যানেল এন্ড এগ্রো ফার্মে ছয় জাতের কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ান জাতের ককেশিয়ান শেফার্ড ও আলাবাই, জার্মান শেফার্ড, পাকিস্তানি জাতের বোলি কুত্তা, মুদহল হাউন্ডস ও দেশীয় সরাইল। জর্জিয়া থেকে ৩টি, রাশিয়া থেকে ২টি, পাঞ্জাবের হরিয়ানা থেকে ২টি,কর্নাটক এর মধুল নামক জায়গা থেকে ৩টি, জার্মান শেফার্ড ঢাকা থেকে ২টি, সররাইল হার্ন্ট ২টি সংগ্রহ করেন। প্রায় ১ একর জায়গার উপর নির্মিত খামারের পরিধি বাড়তে থাকলে ছোট ভাইসহ ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ করা হয় খামারে।

চাকমা ক্যানেল এন্ড এগ্রো ফার্ম এর কর্ণধার বড় চাকমা আরো বলেন, খামারের পোষা কুকুরের বাচ্ছা এবং প্রতিটি কুকুরের দাম প্রায় ৭৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকার মতো। বর্তমানে খামারটিতে প্রায় ১ কোটি টাকার কুকুর আছে। তিনি আরো বলেন, খামারটি করার পর অনেক বড় বড় কোম্পনি ফোন করে খামার করার ব্যাপারে আগ্রহন প্রকাশ করেছে, অনেকে এখান থেকে কুকুর সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

বাঘাইছড়ির স্থানীয় সুদীপ্ত চাকমা বলেন, সরকার যথাযথ উদ্দ্যেগ গ্রহন করলে পাহাড়ে কুকুরের খামারের মাধ্যমে অনেক বেকার তরুণ স্বাবলম্বী হবে।

নিজের খামারে বিদেশী কুকুরের সাথে বড় চাকমা

জানা যায়, ককেশিয়ান শেফার্ড ও আলাবাই রাশিয়ার সৈন্যরা বন্দীদের পাহাড়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করে। এ ছাড়াও ককেশাস অঞ্চলে ভেড়ার খামারিরা নেকড়ে থেকে ভেড়াকে রক্ষার জন্য ককেশিয়ান শেফার্ড কুকুর ব্যবহার করে। এই দুই জাতের কুকুর খুবই হিংস্র। পাকিস্তানি জাতের বোলি কুকুরের মূল আবাসস্থল পাঞ্জাব। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর এই কুকুরগুলোকে ইন্ডিয়ান ম্যাসটিফ ও পাকিস্তান ম্যাসটিফ নামে ডাকা হয়। আর সরাইল হার্ন্ট বাংলাদেশি জাতের হলেও বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কুকুরটি খুবই ক্ষিপ্তগতি সম্পন্ন ও সাহসী।

চট্টগ্রাম বন্য প্রাণী সংরক্ষন বিভাগের কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ পাহাড় বার্তাকে বলেন, কুকুর খামার গড়ার বিষয়ে সরকারের কোন নীতিমালা নেই, এই ধরণের কেউ উদ্দ্যেগ গ্রহন করে আবেদন করলে আমরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো।

আরও পড়ুন