পাড়াবাসীর চাঁদার অর্থে চলে লামার যে প্রাথমিক বিদ্যালয়

NewsDetails_01

লামার সাইরাও থারবা প্রাথমিক বিদ্যালয়
বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত মেনপং ম্রো কারবারী পাড়া। এ পাড়ার আশপাশে রয়েছে আরও তিনটি পাড়া। এসব পাড়ার কয়েক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে নেই সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে অর্ধশতাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারী পাড়ার কিছু সচেতন ব্যক্তি ও শিক্ষার্থী অনুভব করেন, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া ম্রো আদিবাসী সন্তানদের দুর্বিসহ জীবনযাপনের করুণ চিত্র। তারা উপলব্ধি করেন, একমাত্র শিক্ষার অভাবেই পাড়ার শিশুদের এই পশ্চাৎপদতা। তাদের আধুনিক চিন্তাচেতনায় উজ্জীবিত করতে হলে, প্রয়োজন শিক্ষা। আর তখনিই সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে ছনের ছাউনি আর বাঁশের ভেড়ায় বেষ্টিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির নাম দেন, সাইরাও থারবা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিযে পশ্চাৎপদ ওই জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখন স্বপ্ন দেখে শিক্ষার আলোতে নিজেকে আলোকিত করার। প্রতিদিন সকালে ঘন্টার আওয়াজ, ৫-৬ বছরের শিশুদের চেচামেচি, জাতীয় সংগীতের ধ্বনি ও অ তে অজগর, আ তে আম, ক তে কলম, শিশুদের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গে পাড়াবাসির। প্রতিটি শিশু এখন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে; সেই ছোট ছনের ছাউনি আর বাঁশের বেড়ার বিদ্যালয়টিতে। যা দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কোন এক পশ্চাৎপদের জুমের ঘর। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেই জুম ঘরটির ভিতরে শিক্ষা গ্রহণ করছে ৪টি পাড়ার কোমলমতি ম্রো শিশুরা।
বাঁশের ভেড়ার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে ছোট ছোট ফাঁক। যার মাধ্যমে ঘরটিতে প্রবেশ করে আলো-বাতাস। বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় পরিচালনা কমিটি। পাঠদানের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে একজন শিক্ষক। প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে পাঠদান চলে, ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৬০-৬৫জন। বিদ্যালয়টিতে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মাতৃভাষায়ও পাঠদান করানো হচ্ছে। তবে স্কুলে না আসার শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি। শিক্ষকের বেতনসহ যাবতীয় খরচ চলে পাড়াবাসীর চাঁদার টাকায়।
শিক্ষার্থীরা কেন স্কুলে যায় না, এমন প্রশ্লের উত্তরে পাড়ার বাসিন্দা রুইতন ম্রো জানান, বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বই নেই। যা আছে তাও পাশ্ববর্তী কোন এক প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে সংগৃহীত পুরাতন বই। চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ নেই বললেই চলে। যা আছে তাও পাহাড়ে গাছ-পালার ডাল কেঁটে বানানো হয়েছে। তারপরও অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস হতে বইয়ের সংকট মিটানো গেলে ও স্থানীয় প্রশাসন হতে বিদ্যালয় ভবন টিন সেট নির্মাণ করা গেলেই অনুপস্থিত বিদ্যালয়গামী হবে শিক্ষার্থীরা। তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সাইরাও থারবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বই, বিদ্যালয়টি টিন সেট ভবন নির্মাণ, পর্যাপ্ত পরিমাণে আসবাবপত্র সরবরাহ এবং অন্যান্য সকল সমস্যা নিরসনের জন্য বান্দরবান জেলা পরিষদ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতর, উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছে চারটি ম্রো পাড়ার সহজ-সরল মানুষগুলো।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যতীন্দ্র মোহন মন্ডল বলেন, সাইরাও থারবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চালুর বিষয়টি কেউ জানায়নি, তবে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। পাড়ার লোকজন চাইলে বই প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যালয়টিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন