পিননেই সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যার স্বপ্ন বুনন

purabi burmese market

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন এর দূর্গম হরিনছড়া এলাকা। নৌ পথে ১৫ কিঃ মিঃ কাপ্তাই লেক পাড় হয়ে হরিনছড়া ৩ নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়া, বেচারাম পাড়া পাড় হয়ে পৌঁছাতে হয় দুছড়ি পাড়ায়। অদূরেই হরিনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত বুধবার (১৯ জানুয়ারী) শীতের সকালে এই দুছড়ি পাড়ার হরিনছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গিয়ে দেখা পায় সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যার। পিনন তৈরীতে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন, বিশেষ করে উৎসব পার্বনে তাঁরা এটা বেশী পরিধান করে থাকেন।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সান্তনা জানান, তাদের পরিবারের জীবন সংগ্রামের কাহিনী।

সান্তনার বাবা শেল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা পেশায় একজন কৃষক, অন্যের জুমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে। কাজ না থাকলে ঘরে বসে থাকতে হয় তাঁকে। মা, লক্ষ্মী দেবী তঞ্চঙ্গ্যা গৃহিণী। সান্তনারা ৩বোন। সেই সবার বড়। মেঝবোন দয়াবালা তঞ্চঙ্গ্যা কাপ্তাই কর্ণফুলী সরকারি কলেজে এইচ এস সি তে অধ্যয়নরত। আর ছোট বোন আদরবালা তঞ্চঙ্গ্যা প্রাথমিকের গন্ডি পার হয়ে আর পড়ছেন না।

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেই সান্তনা জানান, সে চন্দ্রঘোনা পাহাড়িকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১৬ সালে এস এস সি পাস করে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে। নানা জটিলতায় আর এইচ এস সি পাস করতে পারে নাই। আর্থিক অবস্থার কারনে তাঁকে এই পিনন বুননের কাজ করতে হচ্ছে।

dhaka tribune ad2

সে জানান, তাঁরা ৩ বোনে মিলে এই কাজ করেন। একটি পিনন তৈরীতে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ লাগে। স্থানীয়ভাবে একটি পিনন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আবার বাহিরে নিয়ে গেলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। তাঁরা মাসে কমপক্ষে ৪-৫ টি পিনন তৈরী করতে পারে। মাস শেষে যৎসামান্য লাভ দিয়ে তাঁর পরিবার চলে। সেই জানান, অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ এই পিনন তৈরী করা। আবার পুঁজিও দরকার। যদি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে তাঁরা আরোও বেশী এগিয়ে যেতে পারবে বলে এই প্রতিবেদককে জানান।

১১৯ নং ভাইজ্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা জানান, তাঁর মৌজার অন্তর্গত দুছড়ি পাড়ার সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যা এবং তাঁর আরোও দুই বোন মিলে পিনন বুননের কাজ করে থাকেন। মূলত: তাঁরা তাদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। মহিলারা সামাজিক অনুষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছেদ করে থাকে। তবে জেলা পরিষদ বা সরকারি সংস্থা সমূহ এগিয়ে আসে এই সব দূর্গম এলাকায়, তাহলে এরা এদের প্রতিভাকে আরোও কাজে লাগাতে পারবে।
৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবীন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, তাঁর ওয়ার্ডের দুছড়ি পাড়ায় এদের বসবাস। তাঁরা খুবই গরীব। অনেক সময় তাঁরা সঠিক দাম পাই নাই।

গত ১৯ জানুয়ারী সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শনে সেই এলাকায় যান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মুনতাসির জাহান। এইসময় তিনি দুছড়ি পাড়ায় সান্তনা তঞ্চঙ্গ্যার বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় গিয়ে সান্তনার পিনন বুননের কাজ দেখেন।

ইউএনও প্রতিবেদককে জানান, সরকার যেহেতু উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয়, সহযোগিতা দেয়, ঠিক তেমনি কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন হতে প্রান্তিক পর্যায়ে এই সমস্ত হস্তশিল্পের কারিগরদের আমরা সবসময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।