ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছেন খাগড়াছড়ির সেনারী চাকমা

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির কৃতী ফুটবলার আনুচিং-আনাই ও মনিকা চাকমার পর পাহাড়ের বুকে আলো ঝলমল করা আরেক নক্ষত্রের নাম সেনারী চাকমা। ফুটবলে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগালে পাড়ি জমাচ্ছেন খাগড়াছড়ির এই নক্ষত্র সেনারী চাকমা।

প্রাথমিকে পড়ার সময় বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ফুটবলে হাতেখড়ি সেনারী চাকমার। এরপর বয়সভিত্তিক প্রমীলা ফুটবলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করে ফুটবল জীবনের বাঁকবদল ঘটান খাগড়াছড়ির পেরাছড়ার দুর্গম জনপদে বেড়ে ওঠা সেনারী চাকমা।

প্রাথমিকভাবে সারাদেশ থেকে ৪০ জনকে বাছাই করে বিকেএসপিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পর্তুগালে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ১৬ জনকে নির্বাচিত করা হয়। খাগড়াছড়ির সেনারী চাকমা তাদেরই একজন।

এমন খবরে প্রতিনিয়ত অভাবের সঙ্গে লড়াই করা সেনারী চাকমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। সেনারীর পরিবার ও তার খেলাধুলার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

বান মোহন চাকমা ও কনিকা চাকমা দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সেনারী চাকমা। তিন ছেলেই দিনমজুরি করে। প্রতিনিয়ত অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই করে তিন বেলা খাবার যেখানে অনিশ্চিত সেখানে সেনারী চাকমার ফুটবল খেলা বিলাসিতারই শামিল।

তবু দমে যাননি পাহাড়ি কন্যা সেনারী। জরাজীর্ণ মাটির ঘরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেনারী চাকমার ফুটবল প্রেমে কাঁটা হতে পারেনি দরিদ্রতা। অভাবকে হাসিমুখে বরণ করেই ফুটবলের সঙ্গে মিশে যান সেনারী।

NewsDetails_03

তার সফলতায় উচ্ছ্বসিত পরিবারসহ প্রতিবেশীরা। পায়ের জাদুতে সেনারী চাকমা একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবেন এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আকাশ চাকমা বলেন, আগ্রহ থাকলে অভাব কখনও বাধা হতে পারেনি। এর অনন্য দৃষ্টান্ত সেনারী চাকমা।

সেনারি চাকমা জানান, প্রতিনিয়ত অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে ওঠা ফুটবলার হওয়ার শুরুটা সহজ না হলেও, এখন তার স্বপ্ন জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলা।অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করেই ফুটবল খেলেছি। প্রতিদিন তিন কিলোমিটার হেঁটে স্টেডিয়ামে গিয়ে নিরলসভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি।

নিজের মেধা ও প্রতিভা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জন্য সুনাম অর্জনই স্বপ্ন জানিয়ে সেনারী চাকমা তার অভাবের সংসারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমার পরিবারের অভাব দূর হলে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো।

এসময় পর্তুগালে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানিয়ে সেনারী চাকমা বলেন, সারাদেশ থেকে বিকেএসপিতে প্রশিক্ষণের জন্য ৪০ জনকে বাছাই করা হয়। দুই মাসের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে ইউরোপে প্রশিক্ষণের জন্য ১৬ জনকে বাছাই করা হয়েছে। সেখানে আমি সুযোগ পেয়েছি, যা আমার স্বপ্নপূরণের পথকে বড় করে দিয়েছে।

প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে সেনারী চাকমা জাতীয় দলে জায়গা করে নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চেঙ্গী ফুটবল একাডেমির কোচ ক্যহ্লাসাই চৌধুরীর।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের দিকে সেনারী চাকমা আমার চেঙ্গী ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হয়। শুরুতেই সে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বিকশিত করে। তার ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মনে হলো সে সুযোগ পেলে আরও অনেক ভালো করতে পারে। তখন থেকেই আমরাও তাকে সুযোগ দিয়েছি। সেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

ইউরোপে প্রশিক্ষণ শেষে সেনারী চাকমা দেশ এবং জেলার সম্মান রক্ষার্থে নিজের মেধা ও প্রতিভা কাজে লাগাবে জানিয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তার প্রতি সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে সেনারীর মতো যেসব প্রতিভা আছে, আমরা যদি তাদের লালন না করি তবে এসব প্রতিভার বিকাশ ঘটবে না।

আরও পড়ুন