গ্রামে কিংবা শহরে বর্জ্যপদার্থের বিরাট অংশ দখল করে আছে পলিথিন বা পলিপ্রোপাইলিন। এই উপাদানগুলো মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব বিবেচনায় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সারাদেশে সুপারশপ এবং কাঁচাবাজারে পলিথিন এবং পলিপ্রোপাইলিন (প্লাস্টিকের দ্বিতীয় সর্বাধিক উৎপাদিত পণ্য) ব্যাগের ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এর পরেও খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা জুড়ে অবাধে এসবের ব্যবহার হচ্ছে। সচেতনতার বুলি কানেই তুলছেন না কেহ। দু’একজন শুরু করলে অন্যরাও অনুকরণ করে পরিহার করতে পারেন এসব পলিথিন। তবে আগের তুলনায় কমছে পলিথিনের ব্যবহার।
কিছু কাল আগেও জনসাধারণকে কাপড়ের তৈরি বাজার ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে দেখা যেতো। কালের পরিবর্তনে এসব আর দেখাই যায় না। তবে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের একই দাবি পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ যদি স্বল্পমূল্যে বাজারে সরবরাহ করা যায় তাহলে পলিথিন এবং পলিথিনজাত সবকিছু বর্জন করবেন তারা। একই সাথে ক্রেতা বিক্রতার দু’পক্ষের এক পক্ষ পলিথিনের বিকল্পের ব্যায় বহন করতে হবে বলে তাদের অভিপ্রায় জানিয়েছেন। তবে বাজার মনিটরিং ও বিকল্প পদ্ধতি এই দুটিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
মাটিরাঙ্গা পৌরশহরে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতা কেহই মানছেন না পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে পলিথিনে বাজার করা পণ্য পরে নিবেন বলে দোকানেই রেখে দিচ্ছেন। তাছাড়া কাঁচাবাজার, মাছ, মাংশ, মুদিদোকান সহ এ যাবতীয় দোকান গুলোতে প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে পলিথিন যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
মাটিরাঙ্গার এমন কোন বাজার বা মুদি দোকান খুঁজে পাওয়া যায়নি যেখানে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে অন্য ধরনের ব্যাগ ব্যাবহার করা হচ্ছে। অনেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, আর বেগুন কে সুতলি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। তবে সচেতন অনেক কে আবার পচনশীল বাজার ব্যাগ হাতে দেখা গেছে। তবে মাটিরাঙ্গা বাজারে পলিথিন বিক্রেতারা সরাসরি পলিথিন বিক্রি করেন না। কারো মাধ্যম হয়ে অত্যন্ত চুপিসারে দোকানে পলিথিন এনে দেন তারা। কালো রংয়ের পলিথিন প্রতি পাউন্ড বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা সাদাটি ১১০ টাকায়। তবে সরবরাহ কম এর অজুহাতে আগের তুলনায় দাম হাঁকাচ্ছেনও বেশি। পলিথিন ব্যবসায়ীরাও বিকল্প ব্যবস্থা চান। তাছাড়া বিকল্প সামগ্রী ব্যয়বহুল হওয়ায় এবং সচেতনতার অভাবে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই পলিথিন ব্যবহার করছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
মাটিরাঙ্গা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, অনেকে তরকারি কিনতে এসে বাজার ব্যাগ নিয়ে আসেন না বিধায় আমরা বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করি। নিজেরা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করলে আমাদের আর বেগ পোহাতে হতো না। তাছাড়া পলিথিন উৎপাদন বন্ধ করে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মাছ ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, পলিথিনের ব্যাবহার কমাবো আমরা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ দিব তবে মাছের দামের সাথে দাম ধরিয়ে দিব। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গুনতে হবে ব্যাগের দাম।
সোনালি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মাটিরাঙ্গা মেট্রো’র ইউনিট ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম বলেন, পলিথিন ছেড়ে আমরা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার শুরু করতে পারি, একটা কাপড়ের ব্যাগ সেলাই করলে বছর খানেক চলে যাবে। তাতে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে না বেঁচে যাবে সারাবছর ব্যাগ ক্রয়ের টাকা।
পলিথিনের ডিলার মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার কাছে যে সব পলিথিন রয়েছে সেগুলো বিক্রি করা হয়ে গেলে আমি আর পলিথিন বিক্রি করবো না। একই সাথে নিজেও এসব ব্যাবহার থেকে দুরে থাকবো।
বিস্কুট ব্যবসায়ী রহিম মিয়া বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হলে আমি ভীষণ বিপদে পড়ে যাবো, কারণ আমার পুরো দোকানটাই পলিথিনের ব্যাগ নির্ভর। পলিথিনে মোড়ানে খাবার বিষাক্ত হবে এটা কখনো ভেবে দেখনি। শীঘ্রই এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে খুব ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে তিনি জানান।
পলিথিনের বিকল্প বাজারে না দিতে পারলে আইন কার্যকর করা কঠিন জানিয়ে ভৌমিক ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সরকারের এ মহতি উদ্যেগ কে স্বাগত জানান তিনি একই সাথে পলিথিনের বিকল্প বাজারজাত করার কথা বলেন তিনি।
ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, মকবুল হোসেন নামে নতুন পাড়ার এক লোক আগে কাগজ দিয়ে বিভিন্ন ঠোঙা বানিয়ে বাজারজাত করতেন। পলিথিন সর্বত্র হবার দরুন ব্যাবসায়ে দারুন ভাবে ধস নেমেছে। কাগজের ঠোঙা পুন:বাজারজাত করার জন্য বাজার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা উন্নতি হবার দরুন সে তাদের অনুরোধ ফিরিয়ে দেন।
মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল হামিদ বলেন, আগে পলিথিনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা নাহলে যতই ভ্রাম্যমান অভিযান বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক না কেন পলিথিনের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান করতে হবে। সকলকে নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে পলিথিনের বিকল্প ব্যাবহার করা শুরু করতে হবে।
পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম বলেন, পলিথিনে মোড়ানো খাবার খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী। গত ২৫ নভেম্বর ভোক্তা অধিকার আইনে জরিমানা করার সময়ে সকলকে পলিথিনের ব্যাবহার নিরুৎসাহিত করে পলিথিন বিক্রি করতে নিষেধ করা হয়। তবে এ অভিযানের পর কমতে শুরু করছে যত্রতত্র পলিথিনের ব্যবহার।