মাশরাফীর সমালোচনা করা চিকিৎসক একে এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন আমার অনাকাঙ্খিত বদলি নিয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা একেবারেই ছিল না, যে পরিস্থিতিতে তার বদলি হয়েছে তা স্বাভাবিক নয়,বদলি হবে আমি জানতাম।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি অ্যান্ড অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিমকে রাঙামাটি বদলি করা হয়। গত বুধবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই বদলির আদেশ জারি করে। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পার-১ অধিশাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ওই বদলি আদেশে স্বাক্ষর করেন। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
তিনি নিজেই বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট দেন এ বিষয়ে। তিনি বলেছেন, যে পরিস্থিতিতে তার বদলি হয়েছে তা স্বাভাবিক নয়।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসে হাজার বিশেক চিকিৎসক কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যে পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিষয়ে মাত্র ৩ জন অধ্যাপক চাকুরিরত আছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে যোগ দেবার পর পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ সত্যিকার কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রাম এলাকার শত শত শিশু ক্যান্সার ও রক্তরোগাক্রান্ত শিশু সরকারি হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে। শিশু ক্যান্সার আক্রান্তদের ঢাকা বা বিদেশগামীতা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে শতাধিক শিশু ক্যান্সার রোগী তার অধীনে চিকিৎসাধীন আছে। এমতাবস্থায় তার বদলি এই শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ, আমার অনাকাঙ্খিত বদলি নিয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা একেবারেই ছিল না। বদলি হবে আমি জানতাম, কারণ ক্রিকেটার মাশরাফি ইস্যুতে যে ৬ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের দু জনকে একমাস আগেই দুর্গম স্থানে বদলি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘দুজন সহযোগী অধ্যাপকের বদলির বিষয়টি জানার পর বিএমএ মহাসচিব, স্বাচিপ সভাপতি ও মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা বদলি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করি। তারা কি করেছেন জানি না, তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল বদলির আদেশ পেলাম।’
অধ্যাপক এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, চিকিৎসা তার পেশা এবং নেশা। তার জীবনের সিংহভাগ সময়ই গেছে এই পেশায় উৎকর্ষ সাধনের চেষ্টায়। তাই চিকিৎসকদের জন্য তার আমৃত্যু ভালবাসা থাকবে। কেউ চিকিৎসক সমাজকে অন্যায় আক্রমণ করলে স্বাভাবিকভাবেই তার মন ভারাক্রান্ত হবে এবং নিজের সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করবেন।
নিজের বদলির বিচারের ভার সময়ের উপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রিয় চিকিৎসক ভাই বোনেরা, আমি কোনো সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করিনি, কোনো দুর্নীতি করিনি, কোনো সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত হইনি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমি সাংসদ মাশরাফি ভার্সেস নড়াইলের চিকিৎসকদের ইস্যুতে অন্য এক চিকিৎসকের পোস্টে একটি কমেন্ট করেছি। আমাকে শোকজ করা হয়েছে, যার উত্তর আমি দিয়েছি। চাকরিবিধি অনুযায়ী আমি কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিনি।
আরো জানা গেছে, ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটো অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম মাশরাফির হাসপাতাল তদারকির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে তার টাইমলাইনে লেখেন, ‘বাংলাদেশের ডাক্তারদের বোল্ট (বোল্ড) করতেই বড়ই আনন্দ। ম্যাশ চিকিৎসার জন্য অনেকবার ডাক্তারদের ছুরি কাঁচির নিচে গেছেন। তাদের অনেক তোয়াজ করতে হইছে। সেই ডাক্তারের বংশবদ পাইছি এবার।’ যদিও নিজের দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ডা. একেএম রেজাউল করিম তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘ডিঅ্যাক্টিভ’ করে দেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসকের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসকে অনুচিত, অনভিপ্রেত ও অসদাচরণ হিসেবেও উল্লেখ করে। এই চিকিৎসকের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায়।