বন্যার পানি কমলেও ২টি কাঠের সেতু ভেঙে চরম জনদূর্ভোগ

NewsDetails_01

দেশের ক্রমাগত বন্যায় খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে জনদূর্ভোগ চরম পর্যায়ে। ভোগান্তিতে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ।

নিচু এলাকার পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলসমূহ পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার একাধিক প্রবীণ নাগরিকের কাছে পরিস্থিতি জানতে চাইলে তারা বলেন, স্বাধীনতার পরে এমন পানি দেখনি কেহ।

ইতিমধ্যে বৃষ্টি কমায় বিভিন্ন স্থানে পানি কমতে শুরু করলেও ক্ষত চিহ্ন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নিচু এলাকাসমূহে পানি স্থির অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া পানি বেড়ে যাবার ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের মাটির ঘর মুহূর্তেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার দৃশ্য নিজ চোখে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।

অতিমাত্রায় বৃষ্টির ফলে মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। গোমতি মাটিরাঙ্গা, তাইন্দং মাটিরাঙ্গা সড়কে এসব পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এক স্থানের সড়কের মাটি সরানো শেষ হলে আরেক স্থানে ধসের ঘটনা ঘটে। সড়কে পানি উঠার ফলেও যান চলাচল ব্যাঘাত ঘটে। যাত্রীদের যাতায়াতে চরম ভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়। যাত্রীরা কিছু পথ হেটে বিকল্প পথে পাহাড় বেয়ে বাকি পথ মটর বাইক বা বিভিন্ন বাহনে যাতায়াত করে।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর ও বড়ঝালাসহ ছয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। ওই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টি মসজিদ একটি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে এসব অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের জন্য এই দুই সেতুই প্রধান ভরসা। ঝুঁকি নিয়ে ঝুলন্ত কাঠের সাঁকো পার হওয়ার সময় ঘটেছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। তাছাড়া সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে বহু। ইতিপূর্বে দুইটি সেতু বিদ্যমান থাকলেও বন্যার পানিতে বিনষ্ট হয়ে যায় দুটি সেতু। ফলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।

মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার বড়ঝলা ও মোহাম্মদপুর সংযোগ স্থাপনে দুটি কাঠের সেতু রয়েছে। গত দুই দশকের অধিক সময় ধরে এপারের সঙ্গে ওপারের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এটি। এদিকে ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে এ বছরের মে ৯মে মাটিরাঙ্গা জোন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক মেয়র, ৭,৮ নং কাউন্সিলর এবং হারুন মিয়ার যৌথ অর্থায়নে বড়ঝলা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যেটি নির্মাণের ৪ মাসের মধ্যেই ধসে যায় সেতুটি।

NewsDetails_03

বড়ঝলায় সেতুটি ওই সময় নষ্ট হয়ে যাবার ফলে ২০২১ সালে তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা) মো. হেদায়েত উল্যাহকে দ্রুত সাঁকোটি ঠিক করতে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে জনদুর্ভোগ লাঘবে কাঠের ঝুলন্ত সাঁকোটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে সেতুটি নির্মাণ শেষে ফের জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ ভোগান্তির অল্প সময়ের জন্য লাঘব হয়েছিল এসব গ্রামের মানুষের।

এদিকে সম্প্রতি কাঠের সাঁকোগুলো নষ্ট হয়ে যাবার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা বিমল কান্তি জানান, আমাদের এই অঞ্চলের লেকেদের দূর্ভোগ কমলো না। আমরা যাতায়াতে খুবই কষ্টে আছি। দ্রুত সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান খোকন বলেন, বছরজুড়ে ধলিয়া খালে পানি থাকে। ফলে ভোগান্তি মানুষের পিছু ছাড়ে না। এবারের সৃষ্ট বন্যায় দুটি সেতুই বিনষ্ট হয়ে যায়। জনদুর্ভোগ লাঘবে ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার প্রশাসক ফেরদৌসী বেগম কে এ বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী জানান, আমরা ইতিমধ্যে বন্যাদূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। বড়ঝলা ও মোহাম্মদ পুর এলাকায় সেতু ভেঙে যাবার বিষয়ে অবগত রয়েছি। তবে এটা পৌরসভার দায়িত্বে পৌর কর্তৃপক্ষ এটা নির্মাণের দায়িত্ব নিবেন।

আরও পড়ুন