স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,গত দুই দিনের টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লামার মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালসহ পাহাড়ি বিভিন্ন ঝিরিগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে শ্রমজীবি মানুষগুলো। পানির স্রোতে সড়ক ভেঙ্গে ও সড়কের উপর পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে আভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সোমবার সকালে বান্দরবানের ওয়াই জংশন এলাকার ৫ কি.মি. এলাকায় পাহাড় ধসে জেলার সাথে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রকৌশল ১৯ ইসিবির রুমা সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খায়ের জানান, সড়কের দুটি জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে, সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ লামার মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ কারনে নদীর দু’পাড়ে বসবাসরত পৌরসভা এলাকার শীলেরতুয়া মার্মা পাড়া, পশ্চিমপাড়া, লামা বাজারপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, মাষ্টারপাড়া, অংহ্লাপাড়া, বৈল্লারচর, মেরাখোলা, মিশনপাড়ার হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গন আতংকে রয়েছে। গত দ্’ুবর্ষায় এ নদী ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়েছে শতাধিক পরিবার। ইতিমধ্যে ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসে প্রানহানির আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, লামা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য দফায় দফায় বলা হয়েছে। এ টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্র্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাই লামাকে বন্যা মুক্ত করতে নদী গতি পরিবর্তন করা অতিব জরুরী।
এদিকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বান্দরবানের লামা,নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রানহানীর ঘটনার কারনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইতিমধ্যে মাইকিং করে বন্যায় প্লাবিত ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার জন্য নৌকার ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রিত ও পাহাড়ী ঢলে প্লাবিতদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
এদিকে জেলার অন্যতম নদী সাঙ্গু নদীতে পানি বাড়ার কারনে সোমবার সকাল থেকে থানচি উপজেলার রেমাক্রি , ছোটমদক ও বড়মদক এলাকায় পর্যটকবাহী নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে, অন্যদিকে নদীটিতে পানি বাড়ার কারনে বান্দরবান জেলা সদরের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবার আশংখা করছে স্থানীয়রা।
লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকাসহ ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করে জনসাধারনকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।