স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার আলীকদমের মিরিনচর পাড়ায় চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রুমপাও ম্রো ফুলের মালা পড়িয়ে দিলে এই চেয়ারম্যান তার ফেসবুক আইডিতে ছবিগুলো প্রকাশ করলে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকে বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি কি একজন নারীকে এই ধরণের জড়িয়ে ধরতে পারেন কিনা।
আলীকদম উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাইনথপ ম্রো বলেন, ছবি চেয়ারম্যান নিজেই প্রকাশ করেছেন,তা ঠিক হয়নি, এটা ম্রো জাতির সন্মান হানী হইছে।
প্রকাশিত চারটি ছবির বাইরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আরো কয়েকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্রো নৃগোষ্ঠির এক নারীকে জনসম্মুখে জড়িয়ে ধরে আছেন। ওই নারীর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট যে, তিনি এতে খুবই অস্বস্তি বোধ করছেন এবং জোর করে চেয়ারম্যানের হাত থেকে ছুটে যেতে চেষ্টা করছেন। চেয়ারম্যান জোরপূর্বক এই আদিবাসী নারীকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ছবি নিয়ে কোন ধরণের অভিযোগ করেনি এই ম্রো নারীর পরিবার থেকে। ম্রো নারীর ভাই মেন রুং ম্রো এমএনপি (ম্রো ন্যাশনাল পার্টি)র কমান্ডার এর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে চেয়ারম্যান আবুল কালাম ওই পাড়ায় গিয়ে সংবর্ধনা নিতে আসেন।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ সালের ২৮ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক দুংরী মং মার্মা ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের বাসায় ককটেল নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবুল কালামকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার রাহাত্তারপুলের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদর্শিক কারনে নাইক্ষ্যংছড়ি বহুল বিতর্কিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদের ঘনিষ্ট বন্ধু বলে পরিচিত আলীকদমের এই চেয়ারম্যান।
এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, পাড়াবাসীর সংবর্ধনায় সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেছি, তাঁরাও জড়িয়ে ধরেছেন, আমিও ধরেছি। এতে দোষের কিছু নেই।
শুধু সামাজিক ভাবে নয়, ক্ষোধ নিজ দলেও গ্রুপিং সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে বিতর্কিত এই উপজেলা চেয়ারম্যানকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যের কারনে কেন্দ্রিয় বিএনপি বহিষ্কার করে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার কারনে জেলা বিএনপির সহ -সভাপতি আবুল কালামকে গত ৩ মার্চ কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে আলীকদম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা এই অশ্লিলতাহানীর বিচারের দাবীতে ইউএনও এর মাধ্যমে স্বারকলিপি প্রদান করে জেলা প্রশাসকের কাছে।
এই ব্যাপারে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনও তরুণী বা কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি আরো বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা আছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল কালাম গত ১৮ মার্চ আলীকদম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামাল উদ্দিন।