বাংলাদেশে নির্বাচনী রাজনীতিতে কিভাবে ফেরার উদ্যোগ নিচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি

NewsDetails_01

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আর এক বছর পরই, আর একে সামনে রেখে গত নির্বাচন বর্জন করা অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন থেকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে।
লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এরই মধ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কক্সবাজার সফর থেকেই বিএনপির নির্বাচনমুখী রাজনীতির সূত্রপাত বলা যায়।
দলের পক্ষ থেকে এ সফরকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বলা না হলেও কক্সবাজার সফরের ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করেই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিবৃতি চলছে। দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচিও।
কক্সবাজার সফরকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বহু নেতাকর্মী সমর্থকদের জড়ো হতে দেখা গেছে। নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকে দলীয় প্রধানের সামনে জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের চেষ্টাও করেছেন এ সময়।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এখন তাদের সব কর্মসূচির উদ্দেশ্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা এবং বিএনপির দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা।
“গত দুই বছর আমরা আন্দোলনমুখী কোনো কর্মসূচি দেই নাই। কিন্তু এখন তো সময় এসেছে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। তাঁর (খালেদা জিয়ার) এই সফরই মাত্র শুরু। এরপরেও আমরা কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করবো। সেখানে ব্যাপকভাবে সারা বাংলাদেশে বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে তিনি সফরে যাবেন।”
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপির মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপির জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা দলের সবাই উপলব্ধি করছেন।
মি. আহমদ বলেন, “আগামী নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে আমরা খুবই আন্তরিক। এবং আমাদের প্রস্তুতিও একইভাবে চলছে। কিন্তু নির্বাচনটা কিভাবে হবে? আমরা দেখেছি ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে যখনই কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন কোনো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে না।”
রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার প্রস্তাব নিয়েও কাজ করছে বিএনপি।
নির্বাচনকালীন ”তত্ত্বাবধায়ক সরকার” পদ্ধতির পরিবর্তে এখন তারা ”সহায়ক সরকার” ব্যবস্থার দাবি তুলেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ক্ষমতাসীন দল এখনও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অনড় অবস্থান ব্যক্ত করছে।
যদি সরকার তার অবস্থানে শেষ পর্যন্ত অটল থাকে, তাহলে কী করবে বিএনপি? – এমন এক প্রশ্নে মওদুদ আহমদ বলেন, “আমরা চেষ্টা করবো শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতার মাধ্যমে কোনো ধরনের সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে একটা সমাধানে আসার।”
“কিন্তু সরকারের এটা আত্ম-উপলব্ধির ব্যাপার। তারা ইচ্ছা করলে জোর করে আরেকটা নির্বাচন করার চেষ্টা করতে পারে। তো সেখানে আমাদের আন্দোলন করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না। আমরা এবার ঐ একতরফা নির্বাচন হতে দেব না।”
এদিকে বিএনপির ইতিহাসে দেখা যায় মোট তিনবার তারা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করেছে। তবে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন দলকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে বলেই বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন।
বিএনপির রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “বিএনপির মধ্যেও অনেকে ভাবেন যে আগামী নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো গত্যন্তর নাই। কারণ বিএনপি এর আগে যে নির্বাচনগুলো বর্জন করেছিল – ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে – সেটা তাদের জন্য খুবই ভাল হয়েছিল। এ কারণে তারা ১৯৯১ সালে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল।”
“কিন্তু গত নির্বাচনটা যে তারা বর্জন করেছে এটা তাদের জন্য অনেক এক্সপেনসিভ হয়ে গেছে,” বলছেন আসিফ নজরুল।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি।
এখন নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দাবির পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনমুখী রাজনীতিও দৃশ্যমান হচ্ছে। আসিফ নজরুলের বিশ্লেষণে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করতে পারে সরকারের ভূমিকার ওপর।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি বিএনপি যেভাবে কথা বলছে, নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে এবং সকল প্রকার সহিংসতা থেকে যেভাবে দূরে আছে, এটা ভাবা স্বাভাবিক যে তারা ইলেকশনে অংশ নেয়ার পথে যাচ্ছে।”
“কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যদি খুবই বড় ধরনের আনসেটেলিং কিছু করা হয়, যেমন হঠাৎ করে বেগম জিয়াকে জেলে দিয়ে দিল বা যদি বিএনপির বড় একটা অংশকে জেলে দিল কিংবা যদি দেখা যায় বিএনপির মধ্যে একটা বড় ধরনের ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করলো বা সফল হলো, এই ধরনের বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে আমি মনে করি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।”
বিএনপি নির্বাচনমুখী তৎপরতা শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু সব আলোচনাতেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কী হবে – সেটিকেই তারা সামনে রাখছে।
বিএনপি ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। এবার তারা চাইছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার।
এ দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী রাজনীতি করবে এবং কিভাবে আন্দোলন পরিচালনা করবে সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে সবার।

আরও পড়ুন