বান্দরবানের এমএনডিপি’র ৭৯ সদস্যের মামলা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ক্যশৈহ্লা’র চিঠি
এক্সক্লুসিভ
বান্দরবানে আত্মসমার্পণের ৫ বছর অতিক্রম হলেও ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহার না করায় মানবিক দিক বিবেচনা করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়ে বিশেষ অনুরোধ করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবরে গত ৩১ ডিসেম্বর পাঠানো এক পত্রে বলা হয়, সেনাবাহিনী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি) এর বিশেষ উদ্দ্যেগে বান্দরবান রিজিয়নের অধীনস্থ আলীকদম জোনের আওতায় আত্মসমর্পণকৃত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এমএনডিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা সমূহ প্রত্যাহার না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এমএনডিপি সদস্যরা গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে পলাতক অবস্থায় অনিশ্চিয়তার মধ্যে জীবনযাপন করছে।
পত্রে আরো বলা হয়, এমতাবস্থায় আত্মসমর্পনকৃত এমএনডিপি সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে/থানায় রুজুকৃত মামলাসমূহ প্রত্যাহারের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহনের বিশেষ অনুরোধ করা হলো।
এই ব্যাপারে আলীকদম ম্রো ছাত্রাবাসের পরিচালক ইয়াংলক ম্রো বলেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পত্র দিয়েছে শুনেছি, এটা দ্রুত কার্যকর করলে এমএনডিপি সদস্যরা আতংকমুক্ত হয়ে সমাজে বিশেষ অবদান রাখতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর থানায় ৮জন, থানচি থানায় ৩১ জন, লামা থানায় ২৬ জন ও আলীকদম থানায় এমএনডিপি’র সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। আত্মসমার্পণের পর বিভিন্ন স্কুলসহ প্রতিষ্ঠান ও আনসারে এমএনডিপি’র অন্তত ৪০ সদস্যকে চাকরী দেওয়া হলেও এমএনডিপি’র অন্য সদস্যদের মতো তারাও মামলার কারনে হয়রানির শিকার হচ্ছে।
এই ব্যাপারে এমএনডিপি’র সাবেক সদস্য পুংকাইন ম্রো জানান, মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলার কারনে আমরা আত্মসমর্পণ করি, কিন্তু এতোদিন পরও আত্মসমার্পনকৃত সদস্যদের আটক করায় আতংকে আছি, অনেকে ভয়ে বাড়ি ঘরে যেতে পারছেনা, আমরা মামলা বাতিলের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ম্রো আদিবাসী যুবকদের নিয়ে বান্দরবানে এমএনডিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশীয় ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২০১২ সালের দিকে জেলার থানচি ও আলীকদমের পোয়া মুহুরী ও কুরুকপাতা এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড শুরু করে সন্ত্রাসী গ্রুপটি, তাদের হাতে প্রাণ হারান অনেক ম্রো জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ।
আরো জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর দেশি বন্দুক, পিস্তল, দা, ছুড়ি, বর্ষাসহ ৫৫টি অস্ত্র জমা দেয় এমএনডিপি সদস্যরা এবং এমএনডিপি’র কমান্ডার মেনরুম ম্রো সরকারের কাছে মামলা প্রত্যাহারসহ ১১ দফা দাবি জানান। এসময় এমএনডিপি’র দুই সদস্যকে ২০ হাজার টাকা এবং অন্য ৭৭ সদস্যকে ১০ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয় এবং তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে সরকারী চাকুরি ও মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও ৫বছরেও তাদের মামলা প্রত্যাহার না করার কারনে তারা পুলিশ হয়রানির শিকার হওয়ায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেনা।
এই ব্যাপারে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা বলেন, আত্মসমার্পনকৃত এমএনডিপি’র সদস্যদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য পত্র দিয়েছি,আশাকরি এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
প্রসঙ্গত,২০১২ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এমএনডিপি’র ৩৭ জনেরও বেশি সদস্য গ্রেফতার হয়, আত্মসমর্পণ করে ৪২ জন এবং ২০১৫ সালে আত্মসমার্পন করে ৭৯জন সদস্য।