বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার এক উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তিনটি গণমাধ্যমের বান্দরবান ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে সাংবাদিক হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি বান্দরবান বেতারে সংবাদ পাঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারী চাকুরিজীবী চাকরী বিধি লঙ্ঘন করে সাংবাদিকতা করতে পারেন কিনা। আর এ নিয়ে এস বাসু দাশ এর প্রতিবেদন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দ্র প্রকাশ বড়ুয়া, ওরফে প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া/ প্রকাশ বড়ুয়া, ২০১৮ সাল থেকে তার কর্মস্থল জেলার রোয়াংছড়িতে। সরকারী দায়িত্বে অনুপস্থিত থেকে কবি, গীতিকার, সংবাদ পাঠক, উপস্থাপক এবং সর্বশেষ সাংবাদিক হিসাবে এই সরকারী কর্মকর্তা নিজেকে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দবোধ করেন। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে অফিস সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠ পরিদর্শনের কথা বলে অধিকাংশ সময় দোয়েল টিভি, সকালের বার্তা এবং আজকের কর্ণফুলী পত্রিকার বান্দরবান ব্যুরো প্রধান এর দায়িত্ব এবং বেতারে সংবাদ পাঠ করে সময় ব্যয় করেন।
সরকারী চাকুরীজীবি সাংবাদিকতা করতে পারেন কিনা এই প্রসঙ্গে দৈনিক প্রথম আলোর বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা বলেন, একজন সরকারী চাকুরিজীবী নিয়ম অনুয়ায়ি সাংবাদিকতা করতে পারে না। একই ব্যক্তির দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের বিধান অনুযায়ী একজন সরকারি চাকুরিজীবী কোন গণমাধ্যমে কাজ করা ও একই সাথে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও ভাতা গ্রহন করতে পারেন না, এটি সরকারের চাকরীবিধি লঙ্ঘন। তিনি বান্দরবান বেতার ও তিন গণমাধ্যম থেকে ভাতা উত্তোলন করেন।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলার রোয়াংছড়ির উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দ্র প্রকাশ বড়ুয়া ওরফে প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়াকে গণমাধ্যমের বান্দরবান ব্যুরো প্রধান কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন, তিনি গণমাধ্যমের বান্দরবান ব্যুরো প্রধানদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি বান্দরবান বেতারের সংবাদ পাঠক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, তিনি দীর্ঘদিন যাবত পেশিবলের দাপটে একই সঙ্গে সরকারি চাকরি ও সাংবাদিকতায় কর্মরত আছেন। তার কর্মস্থলে তিনি সপ্তাহে ১ থেকে দুইদিন উপস্থিত থেকে মাঠ পরিদর্শনের কথা বলে সাংবাদিকতার পাশাপাশি বান্দরবান বেতারে কাজ করেন,যা অফিস সময়ে। প্রভাব খাটানোর কারনে তার বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ির স্থানীয়রা কেউ কথা বলতে পারেনা। নিজের ইচ্ছেমতো অফিসে আসেন আর কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
বান্দরবান জজ কোর্টের একজন আইনজীবি জানান,কেউ যদি সরকারি চাকরী করে গোপনে এই দ্বৈত কাজ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। তিনি একাধিক খাত থেকে বেতন-ভাতা ও সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।
প্রকাশ চন্দ্র বড়ুয়া সপ্তাহের সোমবার ছাড়া রোয়াংছড়িতে অন্যদিন আসেন না। এই প্রসঙ্গে রোয়াংছড়ি সদর ব্লকের রোয়াংছড়ি পাড়ার কৃষক চাইসাথুই মারমা ও মিসিংঅং মারমা পাহাড় বার্তাকে বলেন, এই ব্লকে কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে কে আছেন কৃষকেরা এখনো পর্যন্ত জানেন না।
আরো জানা গেছে, অফিস সময়ে রোয়াংছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে মাঠ পরিদর্শন না করে তিনটি গণমাধ্যমের ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালনের সংবাদ সংগ্রহ ও বান্দরবান বেতারে সংবাদ পাঠ, এছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে তিনি জেলার ৭টি উপজেলার বেতারের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন এর প্রমান পাওয়া যায় তার নিজের করা প্রকাশিত সংবাদে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান কৃষি বিভাগের (ভারপ্রাপ্ত) উপ পরিপরিচালক মো: ওমর ফারুক বলেন, সরকারী চাকরী করে সাংবাদিকতা করা এটা চাকরী বিধি লঙ্ঘন, এই ধরণের হলে কর্তৃপক্ষ ওর বিরুদ্ধে তদন্ত্র সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।