বান্দরবানের থানচিতে চরম খাদ্য সংকটে আদিবাসীরা

NewsDetails_01

Bandarban-Food-Crisis-News-PIC-(1)-24-5--2016

NewsDetails_03

কারো বাসায় খাবার নেই, আমরা বাচঁবো কিভাবে

২৭টি পরিবার নিয়ে আমাদের হৈয়োক খুমী পাড়া, কারো বাসায় খাবার নেই, আমরা বাচঁবো কিভাবে ? কথাগুলো বলছিলেন চরম খাদ্য সংকটের কবলে পড়া বান্দরবানের থানচির হৈয়োক খুমী পাড়ার বৃদ্ধ কারকারী হৈয়ুক খুমি।
গত বছর বিরুপ আবহাওয়ার কারনে জুমের ফসল ভাল না হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ থেকে খাদ্য সংকটে পড়েছে দূর্গম এলাকার আদিবাসীরা। থানচির দুর্গম রেমাক্রী, তিন্দু, ছোট মদক,বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। খাদ্য সংকটের কারনে তাদের খাদ্য তালিকায় পাতে উঠছে ভাতের বদলে আলুসহ বিভিন্ন পাহাড়ী খাবার।
থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের যোগী চন্দ্র পাড়ার হাতিরাম ত্রিপুরা জানান, বাসায় খাদ্য না থাকায় ছয় সদস্যের পরিবার তিনদিন না খেয়ে ছিলেন।
থানচির এসব এলাকায় ত্রিপুরা, ম্রো, মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস। জুম পাহাড়ে চাষের মাধ্যমে তারা সারা বছরের ধান সংগ্রহ করে রাখেন। কিন্তু কোন কারনে ভাল ফলন না হলে, ইদুর বন্যা দেখা গেলে তাদের বছরের খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হয়না। এর ব্যতিক্রম হয়নি এবছর। খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের চোখে মুখে ক্ষুধার জ্বালা, অনেকে একবেলা ভাত অন্যবেলা আলু, মিষ্টি কুমড়া খেয়ে দিন পার করলেও কয়েকদিন ধরে অনেকের পাতে উঠছেনা খাবার।
রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ নং ওর্য়াড মেম্বার মাং চং ম্রো জানান, সাঙ্গু রির্জাভের বেশ কয়েকটি পাড়ার কারো কাছে খাবার নেই, মানুষ খেতে না পেরে অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে জড়াতে পারে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষ নির্ভর, জুমধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার। পরিবারগুলো জঙ্গলী আলু, মিষ্টি কুমড়া আর কলা গাছের ভেতরের অংশ খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
২নং তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মং প্রু অং মারমা জানান, দুর্গমতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আমার ইউনিয়নের ৭শ পরিবার খাদ্য সংকটে ভুগছে, খাদ্যের অভাবে মানুষ মারাও যেতে পারে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরীভাবে দুর্গত এলাকার ৮শ পরিবারের বিপরীতে ১৬মেঃ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় কম। দূর্গমতার কারনে নৌ পথে ও মানুষ বহন করে এসব খাদ্য পৌছাতেই অর্ধেক পরিবহণেই খরচ হয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মার্মা বলেন, দ্রুত এসব এলাকায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা উচিত, না হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
২০১২ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, খাগড়াছড়ির সাজেক, রাঙামাটির বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এসময় মে-অক্টোবর ছয় মাসের জন্য সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে একটি প্যাকেজের আওতায় খাদ্য সাহায্য দেয়া হয়। প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৫০ কেজি চাল, নগদ ১২শ টাকা, ৩ লিটার ভোজ্য তেল, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬ কেজি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, জুমের বীজ কেনার জন্য এককালীন পরিবার প্রতি দুই হাজার টাকা দেয়া হয়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক জানান, পর্যাপ্ত পরিমান খাদ্য শষ্য আছে তাই দুর্গত এলাকায় জরুরী ভাবে খাদ্য পৌছে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, খাদ্য সংকট অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে বিষয়টি সরকারের জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন