বান্দরবানের পাহাড়ে বেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

NewsDetails_01

বান্দরবান শহরের ইসলামপুর এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার
বান্দরবানে প্রতিবছর পাহাড় ধসে অসংখ্য প্রানহানী ও আহতের ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসূম আসলেই এই ধসের হার বৃদ্ধি পায়। সামান্য বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ে ছোট-বড় পাহাড়, আর এই পাহাড় ধস কেড়ে নেয় অসংখ্য মানুষের প্রাণ,দিনের পর দিন অচল থাকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রতিবছরই পাহাড় ধসে অসংখ্য প্রাণহানীর ঘটনা ঘটলে ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো নেয়া হয়নি কোন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতবছরের ১৩ই জুন জেলা সদরের কালাঘাটায় বসত বাড়ির উপর পাহাড় ধসে মারা যায় ৭জন। একই বছরের ২৩ জুলাই বান্দরবান-রুমা সড়কের দলিয়ান পাড়ায় রাস্তার উপর পাহাড় ধসে পড়ে নিখোঁজ হয় ৫জন পথচারী। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায় জেলার সাঙ্গু নদীসহ কয়েকটি ঝিড়ি ঝরনা থেকে। এছাড়া ও পাহাড় ধসে জেলার থানচি ও নাইক্ষংছড়ি উপজেলায় ২জনসহ সর্বমোট ১৭সালেই ১৩ জন মারা যায়।
সরকারী তথ্য মতে, বান্দরবান শহরে পাহাড়ে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা ১৪৪টি। এর মধ্যে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে বান্দরবান অংশে ৬৫টি, মেঘলা পর্যটনের পুরনো সড়কের অংশে ৬০টি, রোয়াংছড়ি সড়কে ৭টি এবং আশপাশে অন্যান্য জায়গায় ১২টি। এ পরিবার গুলোকে জরুরী ভিত্তিতে সরানো না হলে বর্ষায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু ধসের আশঙ্কা এবং ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে এসব পরিবার। এত মৃত্যুর পরও জেলায় থেমে নেই পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ। গত বছরের বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে যেতে না যেতেই পাহাড় কেটে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কয়েকশ বসতবাড়ি।
পাহাড়ের পাদদেশে থাকা সখিনা বেগম বলেন,‘আমরা বর্ষাতেও এখানে থাকি। তবে বেশি বৃষ্টি হলে এখানে পাহাড় ধসে পড়ে। আমরা চাই, সরকারিভাবে আমাদের জন্য যেন একটি ভালো থাকার ব্যবস্থা করা হয়।’
পাহাড়ের ভূমি অন্যান্য সমতল ভূমির চেয়ে অনেকটা সস্তা, যার কারনে অতিদরিদ্ররা কমমূল্যে পাহাড় কিনে মাটি কেটে পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি করছে বসত বাড়ি। তবে সরকারীভাবে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কোন উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ি নির্মাণ বেড়েই চলছে। সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার। এবছর পাহাড়ের ঢালে নতুন নতুন বসতি গড়ে ওঠায়,গত বছরের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে গেছে।
পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী আরেক নারী মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘এটি ছাড়া আমাদের আর কোনও থাকার জায়গা নেই। তাই আমাদের মরলেও এখানে থাকতে হবে, বাঁচলেও এই পাহাড়ে থাকতে হবে।’
এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ন বসবাসকারীদের আশ্রয়ের জন্য বান্দরবানে তিনটি অস্থায়ি ভাবে আশ্রয় কেন্দ্র করতে উদ্দ্যেগ গ্রহন করা হচ্ছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সরকারকে কাছে সেই ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে,বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ২০১৭সালে ১৬৮জনের প্রাণহানি ঘটে আর আহত হয় ২২৭ জন। পাহাড় ধসে ১৭সালে ৩ হাজার ৭৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ৩৬ হাজার ৬৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিত উপায়ে পাহাড় কেটে ভৌত অবকাঠামো, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট তৈরি ও গাছ কাটার কারণে পাহাড় ধস বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টির সময় এসব পাহাড় সহজেই ভেঙে পড়ে।
এদিকে গত তিনদিনের টানা প্রবল বর্ষণের কারনে গত সোমবার জেলা সদর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ের পদদেশ থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে স্থানীয় প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, এধরণের টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত জনগনকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য অনুরোধ জানায়।
স্থানীয়রা মনে করেন,পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষায় শুধু আশ্বাস নয়, এখনই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিতে হবে মহাপরিকল্পনা,যাতে পাহাড় ধসের প্রানহানী থেকে রক্ষা পায় মানুষ ।

আরও পড়ুন