বান্দরবানের ম্রো পাড়াবাসীর উপর ধারাবাহিক হামলা, অগ্নিসংযোগ !

অভিযোগ লামা রাবার ইন্ড্রাস্টিজের বিরুদ্ধে

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ধারাবাহিক ভাবে ভূমি দখল, জুম চাষাবাদের জমিতে অগ্নি সংযোগ, খাবার পানির উৎসস্থলে বিষ প্রয়োগের পর এবার হামলা চালিয়ে লুটপাট, ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে লামা রবার ইন্ড্রাস্টিজ এর বিরুদ্ধে।

পাড়াবাসীদের অভিযোগ, গত রোববার রাতে পাহাড়ের প্রচন্ড শীতের মধ্যে ট্রাকভর্তি শতাধিক লোকজন এসে গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। এসময় পাড়াবাসীর অনেকে প্রাণভয়ে পাশের পাড়ায় পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পায়। এসময় ঘরে থাকা নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন, স্বর্ণ ও রৌপ্য গহনা নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য এ কাজ করেছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লোকজন, এমন দাবি পাড়াবাসীদের।

ডলুছড়ি মৌজার হেডম্যান জোহান ত্রিপুরা বলেন, গত রবিবার দিবাগত গভীর রাতে ১০-১৫ জন মুখোশধারি সন্ত্রাসী রেয়াংপাড়ায় গিয়ে প্রথমে কামরুম ম্রো, চিংচং ম্রো ও রেঙইয়াং ম্রোয়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার পাশাপাশি আরও ১০টি বসতঘর ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।

রেঙয়েন কারবারি আরো বলেন, রাতে আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পাড়াবাসীর চিৎকারে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি কয়েকটি ঘরে দাও দাও আগুন জ্বলছে। সবাইকে নিয়ে তখন বাড়ির পাশের ঝোপে লুকিয়ে থাকি। হামলাকরীরা বাসতঘরের অনেক কিছু লুট করে নিয়ে গেছে।

NewsDetails_03

পাড়ার রেংয়ুং ম্রো জানিয়েছেন, পাড়ার বেশির ভাগ মানুষ জুমচাষ, বাগান ও দিনমজুরি করে। হামলা কারীরা ঘরের বেড়া খুলে নিচে ফেলে দিয়ে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে, ঘরের অনেক কিছু নিয়ে গেছে, কারো কারো ঘর ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছে, চাষকৃত জমিগুলোও দখলের জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ।

লামার রেয়াংপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া তৈজসপত্র

পাড়ার মেনসিং ম্রো, মেনরাও ম্রোসহ অনেকে অভিযোগ করে জানান, লাংকম কারবারী পাড়া, জয় চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারী পাড়া ও রেংয়েন ম্রো কারবারী পাড়ার ৩৯টি পরিবারের প্রায় ২০০ নারী পুরুষ ও শিশুর বসবাস। এ পাড়ার লোকজন বংশ পরস্পরায় প্রায় ৪০০ একর পাহাড়ি জায়গায় জুষ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে লামা রবার ইন্ড্রাস্টিজ রাবার প্লটের নামে জুমের জায়গা দখল করে গত বছরের ১৯ মার্চের দিকে। একই বছরের ২৭ এপ্রিল আগুনে ১শ একর জুমের ধান, বাঁশ, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলদ বনজ বাগানে অগ্নিসংযোগ করে এবং ৬ সেপ্টেম্বর মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন ম্রোদের খাবার পানির উৎস ঝিরির পানিতে বিষ প্রয়োগ করে।

তবে এই ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা সদস্য মোঃ আব্দুল মালেক জানান, ম্রোদের সাথে আমাদের ভূমি বিরোধ আছে সত্য, কিন্তু গভীর রাতে আমাদের পক্ষে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা দূরে থাক, ম্রোদের সশস্ত্র পাহারার কারনে আমরা দিনের বেলায় পর্যন্ত ঐ জায়গায় যেতে পারি না।

লামার রেয়াংপাড়ায় এভাবে তচনছ করা হয়েছে বসত ঘরের খাদ্য সামগ্রি

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন থেকে ম্রো ও ত্রিপুরারা আমাদের সৃজিত বাগানের নানা প্রজাতির বৃক্ষ নিধন করে বসতি নির্মাণ করছিলেন। আমরা এই বিষয়ে লামা থানায় অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ তাদেরকে বাগানের গাছ কেটে বসতি নির্মাণ করতে বাধা দেন। একারনে হয়তো তারা নিজেরা অগ্নি সংযোগ ও ভাঙচুর করে রাবার কোম্পানিকে ফাঁসাতে চেষ্টা করছেন।

এই ব্যাপারে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঘটনার পর পুলিশি নজরদারী বাড়ানো হয়েছে, এই ব্যাপারে কোন পক্ষ এখনও অভিযোগ দায়ের করেনি, অভিযোগ করলে তদন্ত্রপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লামার ইউএনও মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, আগে থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সবাই যাতে যার যার অবস্থানে যেন থাকে। বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে নতুন করে কোনো কিছু স্থাপনা করা যাবে না।

আরও পড়ুন