বান্দরবানের ১৪১তম রাজপূণ্যাহ মেলা অনিশ্চিত

NewsDetails_01

বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী
প্রশাসনিক অনুমতি না মেলার কারনে কাল শুক্রবারের রাজপূণ্যাহ আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মেলা আয়োজনের জন্য রাজপরিবার প্রশাসন থেকে অনুমতি পায়নি বলে পাহাড়বার্তা’কে নিশ্চিত করেছে বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং।
মেলাকে ঘিরে জেলা শহরের রাজার মাঠে বিভিন্ন জেলা থেকে দোকান নিয়ে দোকানীরা এসে প্রস্তুতি গ্রহন করলেও আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ দোকানগুলো ভেঙ্গে দেয় বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়িরা। প্রশাসনিক অনুমতি না মেলার কারনে পুলিশ এই পদক্ষেপ গ্রহন করে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উৎসবমুখর পরিবেশে এই মেলা উপভোগে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করে বান্দরবানে। ঐতিহ্যবাহী এই রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের ১০৯টি মৌজার ১০৯ জন হেডম্যান ও ১ হাজার ৫ শত কারবারী (গ্রাম প্রধান) নিজ নিজ মৌজার পক্ষ থেকে আদায়কৃত রাজস্ব রাজাকে প্রদান করে, তবে শেষ পর্যন্ত মেলার অনুমতি পাওয়া নাগেলে রাজপূণ্যায় মেলার আয়োজন বাদ দিয়ে পুরাতন রাজার মাঠে রাজকর আদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সারবেন বোমাং রাজা। পাহাড়বার্তাকে এমন তথ্য জানান বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরীর সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং।
আরো জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজবাড়ী থেকে বিউগল ও সানাইয়ের সুরে সৈন্যসামন্ত নিয়ে রাজা নেমে আসবেন। এরপর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠে গিয়ে সমবেত হয়ে খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে অংশ নেবে রাজপরিবারের সদস্য ও অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে কৃষিমন্ত্রী ড:মো:আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া দেশি বিদেশি অতিথির উপস্থিতিতে চলবে তিন দিনব্যাপী রাজমেলা।
জেলা পুলিশ সুপার মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার জানান,সামনে উপজেলা নির্বাচন, তাই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে মেলার আয়োজন করতে দেয়া যাবেনা। আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মেলা আয়োজন না করার জন্যে সুপারিশ করেছি।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান,রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
আরো জানা যায়, বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতির্য্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।
বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ বোমাংগ্রী উ চ প্রু চৌধুরী জানান, বোমাং সার্কেলের ১৪১তম মেলায় আমি বান্দরবানসহ সকল আগত দর্শনার্থীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
প্রতিবছর রাজমেলায় হেডম্যান কারবারী ও অতিথিদের কাছ থেকে উত্তোলনকৃত রাজস্ব খাজনা থেকে ৪২% রাজা, ২৭% হেডম্যান এবং ২১% রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে, আর বছরের পর বছর ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য রাজপরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরে একবার এই রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্টান করা হয়।

আরও পড়ুন