বান্দরবানে কেএনএফ এর নিহত সদস্যের নাম বেনেট ম্রো !

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এর বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১ জন কেএনএফ সদস্য নিহত ও অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নিহত কেএনএফ সদস্যের পরিচয় পুলিশ জানাতে না পারলেও পাহাড়বার্তা’র নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা যায়, নিহত কেএনএফ সদস্যের নাম বেনেট ম্রো (২৮)। নিহত কেএনএফ সদস্যেরা পিতার নাম লিট মাং ম্রো। সে জেলার রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের আরথা পাড়ার বাসিন্দা। ম্রো সম্প্রদায়ের হলেও বম সম্প্রদায়ের মেয়ে বিয়ে করে কেএনএফএ যোগ দেন, জেলার সুয়ালক ইউনিয়নের শ্যারন পাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করছিলেন।

আজ রোববার দুপুরে রুমা উপজেলার আরথাহ পাড়া ও বাচলং পাড়ার মাঝামাঝি একটি স্থান থেকে কেএনএফ সদস্যের লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি অস্ত্র ও ৩৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা করে পুলিশ। যৌথবাহিনী বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে মারা যায় সে, তবে কোন ভাবেই তার নাম জানা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, রুমা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে মুলপি পাড়া গ্রাম। ওই গ্রামে বম সম্প্রদায়ের ৮০টি ও মারমা সম্প্রদায়ের ৫১টি পরিবারের বসবাস। গ্রামটি দুর্গম এলাকায় হওয়ার কারণে ওই এলাকা দিয়ে কেএনএফ সদস্যরা প্রতিনিয়ত চলাফেরা করত। তাদের এই চলাচলের কারণে গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। কেএনএফের অত্যাচারে সবাই তটস্থ থাকাদের কেউ কেউ রুমা বাজারে আশ্রয় নিয়েছেন ৫১ টি মারমা পরিবারের ১৪৬ জন, কোনো কোনো পরিবার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ জঙ্গলে লুকিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এই ব্যাপারে মারমা ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সুই প্রু চিং মার্মা বলেন, শনিবার রাত থেকে আশ্রিতদের সব ধরণের সহযোগীতা করছে সবাই, জেলা প্রশাসন ত্রান বরাদ্ধ দিয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে থাকবে।

NewsDetails_03

বম সম্প্রদায়ের যুবকদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ। মুলপি পাড়ায় ৮০টি বম সম্প্রদায়ের পরিবার থাকলেও তাদের কোনো পরিবার পালিয়ে আসার খবর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি কেএনএফসহ পাহাড়ে গোপনে প্রশিক্ষণরত সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

স্থানীয়রা জানান, গত ১০ অক্টোবর থেকে জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ির সীমান্তবর্তী রাঙামাটির বিলাইছড়িতে সন্ত্রাস নির্মূলে অভিযান পরিচালনা করে যৌথবাহিনী। এরপর রুমা উপজেলা থেকে বম সম্প্রদায়ের ৭০টি পরিবারের তিন শতাধিক নারী-পুরুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মিজোরামে আশ্রয় গ্রহন করে, তারা সেখানে বর্তমান পরিস্থিতির প্রশমনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এই ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, সেনা বাহিনীর সাথে কেএনএফ এর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি লাশ উদ্ধার করে, এই ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

পাহাড়ের ৯টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি-চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চায় কেএনএফ, গত বছর প্রায় ১ হাজার সদস্য নিয়ে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। গত ৯ অক্টোবর থেকে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে জঙ্গী বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। কেএনএফ আস্তানায় জঙ্গী সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার জঙ্গীদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। গত ২০ অক্টোবর থেকে সেখান থেকে ৭জন জঙ্গী ও ৩জন কেএনএফ সদস্য এবং ১১ জানুয়ারী আরো ৫জন জঙ্গীকে আটক করে র‌্যাব।

রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মামুন শিবলী বলেন, আশ্রয় নেয়া লোকজনের খবর নেয়া হয়েছে, তাদের সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে, আরও পালিয়ে আসতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন