বান্দরবানে কেএনএফ ও শান্তি কমিটির সাথে ৪ বিষয়ে সমঝোতা স্বারক সম্পন্ন

কড়া নিরাপত্তায় বৈঠক

অবশেষে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে বান্দরবানে বহুল আলোচিত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে প্রাথমিক সমঝোতা স্বারক সম্পন্ন হয়েছে। আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে জেলার রুমা উপজেলার মুনলাই পাড়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম স্বশরীরি বৈঠকে এ সমঝোতা স্বারক সম্পন্ন হয়।

কেএনএফ প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং টিম লিডার এন্ডার লাল এং লিয়ান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা’র এর মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর ৪টি বিষয়ে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিষয়গুলো হচ্ছে, ১-শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে কেএনএফ কোন শসস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত হবেনা, আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী বজায় রাখতে চেষ্টার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহযোগীতা মূলক সম্পর্ক রাখা। ২- কুকি সম্প্রদায়ভূক্তদের নিজ আবাসস্থলে ফেরার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ৩- কেএনএফ এর পক্ষ থেকে কুকি চিন সম্প্রদায়ের ভাগ্যেন্নয়নে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,খাদ্য সহায়তা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করবে, যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য বিবেচনা করা হবে। ৪-পরবর্তী সংলাপ আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে, বৈঠকের তারিখ উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারন হবে।

শান্তি কমিটির মূখপাত্র কাঞ্চন জয় তংচঙ্গ্যা বৈঠকের বিষয়ে জানান, বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা’র নেতৃত্বে ৮ সদস্য এবং কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের প্রধান উপদেষ্টা লাল এন লিয়ান বমের নেতৃত্বে ৫ সদস্য অংশ নেয়। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ্ আলম,ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বৈঠককে ঘিরে মুনলাই পাড়ায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ বিজিবিসহ মোতায়েন ছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সদস্য।

NewsDetails_03

গত ২২ জুন পার্বত্য জেলা পরিষদ সভা কক্ষে পরিষদ চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ক্যশৈহ্লা শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করে। গত ১৯ জুলাই, ৪ আগষ্ট, ২১ সেপ্টেম্বর পৃথক স্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১০ সদস্য ও ভার্চুয়ালি কেএনএফের ৪ সদস্য বৈঠকে অংশ নেয়, আর সামনা সামনি এটিই প্রথম বৈঠক।

এই বিষয়ে রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শৈবং মারমা বলেন, বৈঠকটি ইতিবাচক, এর মাধ্যমে এলাকায় আগের মতো শান্তি ফিরে আসবে বলে আমি আশাবাদি।

আরো জানা গেছে, কেএনএফ এর সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে জেলায় পর্যটক যাতায়তে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি ও পরে প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন। গত বছরের ১৫ নভেম্বরের পর ১৩২ টি পরিবারের ৫৪৮ জন ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নেয়। গত ২৮ জানুয়ারি রুমা সদরে ১৪০ মারমা নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় গ্রহন করলেও তারা গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিজ বাসায় ফিরে যায়। ১০ মার্চ রাঙামাটির বিলাইছড়ির ৪নং বড়থলি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এর ৩টি পাড়া থেকে ৫৬ পরিবারের ২২০জন তংচঙ্গ্যা রেইছা ও রোয়াংছড়ি সদরে আশ্রয় গ্রহন করে। এই ঘটনায় ৫ সেনা সদস্য নিহত ও কেএনএফ সদস্যসহ নিহত হয় আরো ১৬ জন, অপহরণের শিকার হয় অন্তত ২০ জন। এর ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ধস ও জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করে।

অন্যদিকে কেএনএফ এর সাথে জঙ্গী সংগঠনের যোগসাজস আছে দাবী করে যৌথ বাহিনী জানায়, এই সময়ে পাহাড়ে অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৬৮ জন জঙ্গী ও কেএনএফ এর বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়, এসময় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ক্যা শৈ হ্লা জানান, কেএনএফের সাথে স্ব-শরীরি প্রথম বৈঠক খুবই আন্তরিক ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে চলমান সমস্যা নিরসন হবে।

আরও পড়ুন