পারিবারিক বিরোধ, স্বামী স্ত্রীর মনমালিন্য, আর্থিক সংকট, ভুল বুঝাবুঝি কিংবা মান অভিমান নিয়ে অনেকে অতিরিক্ত আবেকপ্রবণ হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। বান্দরবানে চলতি বছরে আত্মহত্যাকারী ৯ জনের মধ্যে ৭ জন লামা উপজেলার বাসিন্দা, যা উপজেলারটির জন্য চরম উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভুল বোঝাবুঝি, আর্থিক সংকট এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে আবেগ প্রবণ হয়ে আত্মহননের অধিকাংশ ঘটনা ঘটছে। তুলনামূলক ভাবে দেখা যায়, বান্দরবান জেলার মধ্যে এই বছর শুরুর দিক থেকেই লামা উপজেলায় অধিকাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আর এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করেছেন পাহাড়বার্তা’র গবেষণা সেল এর প্রধান সুহৃদয় তঞ্চঙ্গ্যা।
পাহাড় বার্তা’র গবেষণা সেল এর তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত আত্মহত্যার ৯ টি ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ৭ টি ঘটেছে লামা উপজেলায়।
জরিপে দেখা যায়, ৫’ই ফেব্রুয়ারী ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের লাইল্যারমার পাড়া নামক স্থানে স্বামীর সাথে অভিমান করে ইয়াসমিন আক্তার(২০) নামে একজন আত্মহত্যা করে। ১০’ই ফেব্রুয়ারী সরই ইউনিয়নের মা-বাবার সাথে অভিমান করে তাছলিমা বেগম (১৮) নামে আত্মহত্যা করে আরেকজন এবং একই মাসে ১৪ ফেব্রুয়ারী খেলার ছলে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্বর্ণা আক্তার নামে (৯) এক শিশুর মৃত্যু ঘটে।
এই বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল জানান, আত্মহত্যাকারীরা অনেকের অজ্ঞতা এবং অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ মানুষ। মানসিক দিক দিয়ে দূর্বল হওয়ার কারণে এমন ঘটনা হচ্ছে। স্কুল কলেজগামী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সচেতনমূলক আলোচনা করলে আত্মহত্যার সংখ্যা কমে আসবে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১১ ও ১৯ মার্চ স্ত্রী সাথে অভিমান করে শফিক মিয়া (৩৪) এবং লামা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডবয় শাপলু মোহর(৩২) নামে আত্মহত্যা করে দুইজন। আবার, ২০ এপ্রিল এবং ৩ ই মে পারিবারিক কলহের জেদ ধরে আলিফা বেগম(২৮) এবং দীপক ধর নামে একজন ছেলে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে ২৮ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি বাইশারীতে নাইএছা মার্মা(১৫) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করে।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী জানান, বান্দরবান জেলার মধ্যে লামা উপজেলা একটি জনবহুল এলাকা। এখানে মাদক ও তামাক চাষ বেশি হওয়ার কারণে অনেকে বিভিন্ন মানসিক দুঃচিন্তায় ভোগেন। হতে পারে এই কারণে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি। তবে তুলনামূলক ভাবে লামায় আত্মহত্যার বেড়ে যাওয়া নিয়ে একটি সাইকোলজি গবেষণা প্রয়োজন।