বান্দরবানে জমজমাট হোম কোচিং বাণিজ্য

NewsDetails_01

বান্দরবানের বালাঘাটা এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থিত কোচিং সেন্টারে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা
বান্দরবানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং সরকারের প্রশাসনের নাকের ডগায় শিক্ষকরা বান্দরবানে হোম কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়লেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যতাযথ পাঠদান না করে এসব কোচিং সেন্টারে নামে হোম কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসে পর মাস বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফলে জেলায় শিক্ষা ক্ষেত্রে আশানুরুপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
আরো জানা গেছে, বান্দরবান জেলা শহরের বালাঘাটা এলাকায় ৫টি, মেম্বারপাড়া ও আর্মিপাড়ায় ৪টি, ডিসি অফিসের সামনে বহুতলা ভবনে ১টি, ডিসি বাংলো এবং এলজিইডি অফিসের সামনে ৩টি কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারসহ আরো বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। সেইসব কোচিং সেন্টারের বেশিরভাগ কক্ষই মাত্র ৮ বাই ১০ফুটের মধ্যে,আবার বেশকটি কক্ষ নির্মাণাধীন ভবনের জীর্ণ-শীর্ণ কক্ষের ভেতরে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে।
জেলা শহর এবং শহরের আশেপাশের এলাকাসমুহে সারাবছর ধরেই চলমান কোচিং পাড়ানোর সেন্টার সমুহের পরিবেশ খুবই নোংরা, ছোটপরিসরের অপর্যাপ্ত আলো-বাতাসের কক্ষগুলোতে গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। এমন কি সে সকল প্রাইভেট সেন্টারগুলোতে শিক্ষার্থীর পরিমাণ এতটাই বেশি যে শিক্ষক দাড়াঁনোর জন্য নেই পযাপ্ত জায়গা।
২০১২ সালে ২০ জুন কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একেই বছর ২৫ জুন নীতিমালায একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে সব বিষয়ের জন্য স্কুল ভিত্তিক কোচিং ফ্রি সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নীতিমালায় বলা আছে সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য স্কুল কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে দিনে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। কোন কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে ও কোচিং বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না।
বান্দরবানের বালাঘাটা এলাকার একটি বাড়িতে অবস্থিত কোচিং সেন্টারে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা
প্রাইভেট বা কোচিং প্রচলিত আইনে বৈধ কিনা জানতে চাইলে বান্দরবান ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হরিধন চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টা আইন সংঘত নয়, আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় আমাদের এক সভায় বলে দিয়েছেন কোচিং বন্ধে করে দিতে।
সরকারের নীতিমালা অমান্য করে অভিভাবকদের আর্থিক সক্ষমতা না থাকা সত্তে¡ও বহু স্কুলের অর্থলোভী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট বিষয়ে ফেল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে কোচিং পড়তে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন,মেথ (গণিত), ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থ,জীববিজ্ঞান ইত্যাদি বিভাগের স্যারেরা শ্রেণি কক্ষে বলে থাকেন পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াটা বাধ্যতামুলক, যেসব শিক্ষার্থী কোচিং বা প্রাইভেট পড়বে না তাদেরকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করা হবে।
সমাজে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া নিম্ম আয়ের অভিভাবকদের স্কুল কলেজের বেতনের অতিরিক্ত ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে( বিষয় ভিত্তিক) দিয়ে নিজেদের সন্তানকে প্রাইভেট বা কোচিং পড়ানো সম্ভব না বলে জানান এবং অভিভাবকরা আরো জানান এ অবস্থা অচিরেই বন্ধ করা না হলে মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলন করা হবে।
এই ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট্র ( শিক্ষা ও আইসিটি) মুফিদুল আলাম বলেন, যে সমস্ত শিক্ষক কোচিং প্রাইভেটের সাথে জড়িত তাদের সাথে প্রথমে বসে ২০১২ সালের নীতিমালা অনুযায়ি কোচিং বা প্রাইভেট পরিচালনার জন্য বলে দিব এবং পরে আইন অমান্যকারীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন