বান্দরবানে ট্যুর এক্সপার্ট এর অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম গ্রেপ্তার
২ পর্যটক নিহত
বান্দরবানের আলীকদমে ভ্রমনে এসে এক নারী পর্যটকসহ দুজন নিহত ও একজন নিখোঁজের ঘটনায় করা মামলায় অনলাইনভিত্তিক ট্যুর গ্রুপ ‘ট্যুর এক্সপার্ট’-এর অ্যাডমিন বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত নারী পর্যটক স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান মামলা করলে আজ শনিবার (১৪ জুন) বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মির্জা জহির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বর্ষা ইসলাম তার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করতেন।
তার ‘ক্রিসতং রুংরাং সামিট (৩০ তম)’ ইভেন্টে অংশ নিতে গিয়ে স্মৃতি আক্তার গত ৮ জুন আলীকদমের উদ্দেশে রওনা হন। এর পর থেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ ছিলোনা। গত ১৩ জুন স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, বর্ষা ইসলাম স্থানীয় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে মাত্র একজন গাইড (সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা) নিয়ে ৩৩ জনের ট্যুর এর আয়োজন করেন।

তিনি পর্যটকদের আবহাওয়া সম্পর্কে জানাননি। ৯ জুন তারা দুর্গম রুংরাং-ক্রিসতং এলাকার উদ্দেশে রওনা হন। ১০ জুন বর্ষা ১২ জন ও গাইডকে নিয়ে খেমচং পাড়া থেকে আন্ধারমানিক ট্রেইলের উদ্দেশে যান। যার মধ্যে স্মৃতি আক্তারও ছিলেন, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও গাইড ছাড়াই তারা ট্যুর করেন।
১১ জুন বিকেলে শামুক ঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ি ঢলে স্মৃতি আক্তার, মো. হাসান চৌধুরী শুভ এবং শেখ জুবাইরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। ১২ জুন উপজেলার মাতামুহুরি খাল থেকে পোশাকবিহীন শেখ জুবাইরুলের ও ১৩ জুন সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের আমতলী ঘাটে স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। মো. হাসান চৌধুরী শুভ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। শেখ জুবাইরুলের বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ধলইতলা পাচুড়িয়া গ্রামের ও স্মৃতি আক্তার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার বাসিন্দা।
বাদীর দাবি, বর্ষা ইসলামের দায়িত্ব অবহেলা ও অদক্ষতার কারণেই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
এই বিষয়ে আলীকদম টুরিস্ট গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি মিন্টু কর্মকার বলেন, বাম দৌছড়ি এলাকা থেকে ফেরার সময় তিনজন নিখোঁজ হয়, এর মধ্যে দুজনের লাশ উদ্ধার হলেও হাসান এর লাশের সন্ধান মেলেনি।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানিয়েছেন, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন। ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ জন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনও একজনের কোনো হদিস মিলছে না।
প্রসঙ্গত, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের প্রাকৃতি বিরুপ আচরন করলেও গ্রুপটির আলীকদম ট্যুর এর সময় তাদের পর্যাপ্ত গাইড, লাইফ জ্যাকেট, ট্রেকিং ও নদী পারাপারে নিরাপত্তার জন্য কোন দড়ি ছিলোনা।