বান্দরবানের ৭টি উপজেলার মানুষের জন্য বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। এখানে পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা পরিবারের মতোই সেবা পাচ্ছেন। কোনো ধরণের জটিলতা ছাড়াই মাত্র ২০ মিনিটেই একজন পাসপোর্ট আবেদনকারী তার আবেদন জমা দিতে পারছেন।
বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহজেই মিলছে সেবা। সেবার মান নিয়েও সন্তুষ্ট সেবা গ্রহীতারা। অনেকটাই উন্নত হয়েছে সেবার মান। সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে পাসপোর্ট চত্বর। যেন সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষদের হয়রানির স্বীকার না হয়।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট কর্মকর্তারা। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত পাসপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। সুশৃঙ্খল পরিবেশে চলছে পাসপোর্ট অফিসের কাজ। কাজ ব্যতিত আলাদা কোনো ব্যক্তির আনাগোনা নেই। নেই কোনো দালালের দৌরাত্ম।
পাসপোর্ট অফিসে আবেদন গ্রহণ থেকে শুরু করে ফিংগার প্রিন্ট ও পাসপোর্ট ডেলিভারিসহ প্রতিটি পর্যায়ে ফিরে এসেছে শৃঙ্খলা। খোলা হয়েছে হজ্জ্বযাত্রী ও অসুস্থ রোগীদের আলাদা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা। প্রতি সপ্তাহে গণশুনানি কার্যক্রম ও সেবা প্রত্যাশীদের কাছে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার কারণে কমেছে ভোগান্তি। মিলছে সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান।
বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নিয়ে একসময় নানা ধরনের অভিযোগ থাকলেও এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। কোনো আবেদনকারী চাইলেই অফিসের নাম্বারে ফোন দিয়ে তার পাসপোর্টের হালনাগাদ তথ্য জেনে নিতে পারছেন। এসএমএস এর মাধ্যমেও আবেদনকারীকে পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পাসপোর্ট হটলাইন (১৬৪৪৫) চালু করা হয়েছে, উক্ত হটলাইন নাম্বারে কল করে ২৪ ঘন্টা পাসপোর্ট সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিনে বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সহজেই সেবা পাচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই ডিজিটাল সেবা পেয়ে খুশি সেবা গ্রহীতারা।
মো: রিমন নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য বাবাকে বিদেশে নিয়ে যাব। তাই পাসপোর্ট করেছি। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেলাম। এখন পাসপোর্ট অফিসে আসলে সহজেই সেবা পাচ্ছি,এতে আমরা আনন্দিত।
লামা থেকে আসা শাহদাত ইসলাম নামে আরেক সেবা গ্রহীতা বলেন, আমরা আগে দেখতাম পাসপোর্ট করতে আসলে মানুষ অনেক হয়রানির শিকার হতেন। দালালের মাধ্যমে অনেকে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তেন। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। এখন খুব সহজেই সেবা পাচ্ছি এবং দালালের দৌরাত্ম্য না থাকায় আমরা সঠিক সময়ে পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছি।
পাসপোর্ট আবেদনকারী বান্দরবান বাজার এলাকার আলমগীর জানান, আমরা প্রায় চার থেকে পাঁচ বছর ধরে দেখতেছি বান্দরবান এর পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান সন্তোসজনক। বিশেষ করে নিচ তলায় দায়িত্বরত রইসুল ইসলাম এর যিনি ডেলভারী ও তথ্য কাউন্টার এর কাজ করেন, তার কাজ ও ব্যবহার আন্তরিক। সেবার মান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, পাসপোর্ট অফিসে দ্রুত সময়ে সাহায্য করায় আমার বাবাকে উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসা করতে পারছি।
এখানকার অনেক ছেলে মেয়েরা খেলাধুলায় চান্স পেয়ে বিদেশ গিয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জানলাম সেখানে ও পাসপোর্ট অফিসের সহযোগিতা মনে রাখার মতো।
সেবার এমন মান নিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক রইসুল ইসলাম কে প্রশ্ন করলে তিনি যানান, এখানে সেবা দেওয়ার জন্যই আসছি, এটাই দায়িত্ব। তবে যেহেতু এটা রোহিঙ্গা প্রবণ এলাকা,তাই খুব সাবধানে আবেদন জমা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে কিছু মানুষ অখুশি হয়।
বান্দরবান আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী-পরিচালক মো: শওকত কামাল বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি দিনের কাজ দিনের মধ্যে শেষ করে দিতে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকে গ্রাহকের সেবার মান নিশ্চিত করা। জনবল সংকটের কারণে মাত্র ২জন কর্মচারী নিয়ে অনেক সময় রাত পর্যন্তও কাজ করতে হয়। এরপরেও আমরা জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। অত্র অফিসে আরো জনবল পদায়নের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করেছি, আরো জনবল পদায়ন হলে আমরা আরো ভাল সেবা দিতে পারবো বলে আশাবাদী।
তিনি আরো জানান, অনেকে আবেদনকারী প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (যেমন-পুরাতন পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন ইত্যাদি) সঙ্গে আনেন না, ফলে তাদের আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এছাড়া সময়মত পুলিশ প্রতিবেদন না আসলে যথা সময়ে পাসপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় গ্রাহকরা লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে চান না, ফলে মাঝে মাঝে কিছুটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সর্বপরি পাসপোর্ট গ্রাহকদের আমরা পাসপোর্ট বিতরণের নির্ধারিত তারিখে এবং কোনো কোনো সময় নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই পাসপোর্ট বিতরণ করছি, এতে গ্রাহকেরাও অনেক খুশি।