বান্দরবানে প্রতিমা বানাল ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী শিক্ষার্থী ,পূজা করছে হিন্দুরা
বান্দরবানের ডনবস্কো উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র চো চো মার্মা (বাবু)। কয়েক বছর যাবত তৈরি করছেন বিভিন্ন প্রতিমা। সনাতন ধর্মাবলম্বী কিংবা পাল বংশের কেউ না হয়েও যে প্রতিমা তৈরি করেছে তা দেখে হতবাক স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। রাত হলেই বান্দরবানের মধ্যমপাড়ার নদীর পাড়ের তৈরি করা পূজামন্ডপে প্রতিমা দেখতে ভীড় করেন স্থানীয়রা । হাতের ছোঁয়ায় যেন মৃম্ময়ী প্রতিমা ধীরে ধীরে দেবী রূপ ধারণ করছেন।
জানা যায়, দুর্গাপূজা এলেই প্রতিবছরই বান্দরবান রাজার মাঠে পাল বংশের কারিগররা বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা তৈরি করত। প্রতিমা তৈরি করার ওই সময় চো চো মার্মা কারিগরদের অনুকরণ করত । পরে পুকুর থেকে মাটি এনে বাসায় এসে একই ধরণের প্রতিমা তৈরি করার চেষ্টা করত ।
আরো জানা যায়, চো চো এর পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ঝোঁক ছিল মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করার। এবার করোনার মহামারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে মাটি আর খড় ব্যবহার করে বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতিমা তৈরি করে চো চো। পরে প্রতিমা তৈরির বিষয়টি পাড়ার কয়েকজন জানতে পারলে তাকে উৎসাহ দিতে থাকে। আর এ বছর থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণির ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর এই ছাত্রের তৈরি করা প্রতিমা দিয়ে পূজা করছেন সাঙ্গু নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
মহাসপ্তমীর দিন নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেউ বাজাচ্ছেন শঙ্খ, কেউবা ঢাক আর কেউবা দিচ্ছে উলু ধ্বনি। পুরো প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে রং বেরং এর ঝাড় বাতিতে । ছোট পরিসরে তৈরি করা প্যান্ডেলের প্রতিমা দেখতে ভীড় করছেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ । রংতুলির ছোঁয়ায় যেন প্রতিটি প্রতিমা জেগে উঠছে স্ব-মহিমায় । তুলির শৈল্পিক আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে মা দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মহিষাসুরের প্রতিমা।
মধ্যম পাড়ার বাসিন্দা রীনা মল্লিক জানান, চো চো মার্মা এর হাতে তৈরি প্রতিমা দিয়েই পূজা করেছি । প্রতিমা ও পূজার প্যান্ডেল তৈরিতে যা খরচ হয়েছে তা সকলে মিলে দিয়েছি। নিজ এলাকায় পূজা করছি, ভালোই লাগছে।
পূজা দেখতে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিমল বড়ুয়া জানান, গত বছর তার তৈরি করা প্রতিমাগুলো ছোট ছিল । তবে এবার অনেক বড় করে করেছে। ছোট ছেলে, সুন্দর বানিয়েছে।
চো চো মার্মা এর মা সিংহ্লামা জানান, ছেলে বিভিন্ন ধরনের মূর্তি বানাতে পারে। ছোটকাল থেকে কোথাও কাউকে মূর্তি বানাতে দেখলে বাসায় এসে সেটি আবারও অনুশীলন করত ।
চো চো মার্মা জানান, আমি বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা বানাতে পারি । পুকুর থেকে মাটি এনে খড় আর কাঠ ব্যবহার করে বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে এই প্রতিমা তৈরি করেছি। আমার প্রতিমাকে সবাই পূজা করছে।