বান্দরবানে ফুরিয়ে আসছে নৌকার কারিগরদের চাহিদা !

NewsDetails_01

নতুন করে নৌকা তৈরি ও মেরামত কাজ বছরে ছয়-সাত মাস থাকে। এসময় চুক্তিভিত্তিক কাজ করে দৈনিক ৭০০-৮০০টাকা আয় হয়। তবে আয়ের সব টাকা জমিয়ে রাখাও সম্ভব হয়না। আর বর্ষা শুরু হলে সব কাজকর্ম বন্ধ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়-তখন। এভাবে কষ্টের দিন কাটিয়ে আসছেন নৌকার মিস্ত্রী আব্দুর রহমান (৪৫)। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে মানুষ যখন ঘর থেকে অনেকেই বের হয়না, ঠিক তখনই আব্দুর রহমান হাতে হাতুড়ী ও ছিনি ঠুকে মেরে নৌকার তক্তাগুলো আলাদা করবার কাজে ব্যস্ত সে।

কিছুদুর থেকে কাজের দৃশ্য; ঝাপসা হলেও কাঠে পেরেক ঠুকে মারার শব্দ দুর থেকে সহজে শুনা যায় এবং পাশ দিয়ে হাটাচলা মানুষের যে কাউকে কানে বাজবে এ শব্দ। মূলত; এ খাং খাং, খাক্ খাক্ এসব শব্দের তাড়নায় নৌকা মিস্ত্রীর কাছে পৌঁছেন এপ্রতিবেদক।

গত শনিবার (২১এপ্রিল) সকালে বান্দরবানের রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এলাকায় “রুমা করাত মিল’ সংলগ্ন সাংগু নদী চড়ে খোলা আকাশের নীচে কড়া রোদে নৌকা মেরামতের কাজ করছিলেন আব্দুর রহমান। ওই সময় খোলামেলা কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

NewsDetails_03

নৌকা মিস্ত্রি আব্দুর রহমানের বাড়ি সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের মৈশামূড়া গ্রামে। গ্রামের স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পড়ার সময় তাঁর বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন থেকে পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যায় তার। তার কথায়- তখন যা শিখছে, এখন আর মনে কিছু নেই। শুধু স্বাক্ষর করতে জানেন। সে জানায়, বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন, এটা শুনেছি, কোন ব্যাংকে কি কাজ করে, জানিনা। আমার এক চাচা ছিলেন। সে নৌকার মিস্ত্রি কাজ করত। বাবা মারা যাওয়ার পর তার হাত ধরে নৌকা বানানো মিস্ত্রি কাজ করে আসছি। আজকে আমার বয়স পঞ্চশ- ছয় বছর বেশি হবে। হিসেব করে দেখেন, আমার নৌকা মিস্ত্রি বয়স কত হবে এ কথা জানিয়ে নৌকা মিস্ত্রি আব্দুর রহমান আরো জানায়, দেশ অনেক উন্নতি হয়েছে। রাস্তাঘাট ভাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে সাংগু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ব্রীজ হচ্ছে। এমন কি থানছি-রেমাক্রিতে ব্রীজ হয়েছে। এসব ব্রীজের জন্য মানুষের বড় নৌকা বানানোর কাজ চলে গেছে ১৫ বছর আগে। ধীরে ধীরে ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকা বানানো কাজও ওঠে যাবে। একই অবস্থায় আমাদের ভাগ্যও কখনো আর উন্নতি হবেনা।

আব্দুর রহমান বলেন, মানুষের চাহিদা যখন ছিল- থানছিতে টানা ১৫ বছর ছিলাম, রোয়াংছড়ির বেতছড়ায় ৫বছর আর এখানে রুমায়ও ৬বছর চলে,তবে নিয়মিত না। শুস্ক মৌসুমে রুমায় আসি, বর্ষা হলে আবার চলে যায় নিজ এলাকায় । তবে গ্রামের বাড়িতে আমাদের ভিটা মাটি এখন আর নেই। বর্ষায় সাংগু নদীর ভেঙ্গে ঘর নিয়ে গেছে অনেক আগে। এখন সুবিধা জায়গা গিয়ে থাকি। এজন্য নিয়মিত টাকা পাঠান লাগে।

এক প্রশ্নে নৌকার মিস্ত্রি আব্দুর রহমান বলেন, নতুন নৌকা তৈরি ও মেরামত মালিকের সাথে চুক্তিতে হয়। ৩০-৩৫ ফুট লম্বা হলে কাঠ- পেরেকসহ সব যাবতীয় জিনিস মালিকের। দর হবে -২৩ হাজার। এ দরে চুক্তি হলে কাজ শেষে গড় হিসাব দৈনিক আয় সাড়ে সাতশত টাকার মতো। মেরামতের কাজগুলোও দৈনিক আটশ-নয়শ হয়, সেই হিসেব করে কাজ করি। তবে প্রতিদিন ২০০-২৫০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই বাড়িতে সপ্তাহে ১৫শত থেকে দুই হাজার বেশি পাঠানো সম্ভব হয়না। বাড়িতে বৌ ও দুই ছেলে এ টাকায় জীবন যুদ্ধ চলে তার সংসার, জানালেন নৌকা মিস্ত্রি মোহাম্মদ আব্দুর রহমান।

আরও পড়ুন