সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে বাজারে আসা মং মং সিং জানান,বাজারে এসেছি মা বাবার জন্য নতুন পোষাক ক্রয় করবো আর নতুন বছরের নতুন নতুন জিনিস পত্র দিয়ে বাড়ী ঘর সাজাবো । বাংলা নববর্ষ আর আমাদের সাংগ্রাই,তাই ৪ দিন আমরা বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।
প্রতি বছর নানা আয়োজনে মারমা সম্প্রদায় এই বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকে, আর মারমা ভাষায় এই উৎসবকে বলা হয় সাংগ্রাই উৎসব। মুলত তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানেই মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্য বেশি ,তাই বান্দরবানে মুলত এই সাংগ্রাইকে ঘিরে কয়েকদিন চলে বর্ণিল আয়োজন। কদিন বাদেই সাংগ্রাই উৎসব তাই নতুন পোষাক আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ভিড় পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং গ্রামের আদিবাসীরা ভিড় জমিয়েছে স্থানীয় মার্কেটগুলোতে। শেষ মুহুর্তের বেচাকেনায় দারুণ খুশি ক্রেতা বিক্রেতারা।
সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে বাজার করতে আসা মংশৈ প্রু মার্মা জানান, প্রতিবছরের মত এবারেও আমাদের সামনে নতুন বছর আসছে,তাই বাজার করতে এসেছি। পরিবার পরিজনের জন্য নতুন পোশাক ক্রয় করবো আর আনন্দের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে উদযাপন করবো।
বান্দরবান বাজারের ব্যবসায়ী মো:সোহেল বলেন,বাঙ্গালীদের পহেলা বৈশাখ আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্টির নতুন বছরকে ঘিরে এখন জমজমাট আয়োজন চলছে পাহাড়ের প্রতিটি পরিবারে,সারা বছরের চেয়ে তাই একটু বেশি বেচাঁকেনা হয় আমাদের। আমরা এই সময় আমাদের দোকানে নানান ধরনের মালামাল সংগ্রহ করি আর বিক্রি করে ও লাভবান হই।
বান্দরবানের সাংগ্রাই উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক কো কো চিং মার্মা জানান, প্রতিবারের মত আমরা বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৪ দিন বর্ণিল আয়োজন করছি। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে সাংগ্রাই উপলক্ষে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা, মৈত্রি পানি বর্ষন,ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করেছি। আর অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি।
পার্বত্য এলাকায় এই ধরণের বর্ণাঢ্য আয়োজনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ও নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। প্রতিটি অনুষ্টান পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা যেন সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে তার জন্য উৎসবস্থলসহ পুরো বান্দরবানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ।
বান্দরবান সদর থানার অফিসার ইনচাজর্ (ওসি) মো: শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান,বান্দরবানের পরিবেশ সবসময় শান্ত থাকে,তারপরে ও আমরা নিরাপত্তার জন্য কোন ছাড় দেই না। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি এবং অনুষ্টানস্থলের আশে পাশে পর্যাপ্ত পরিমান সিসি টিভি ক্যামরা স্থাপনের মাধ্যমে অনুষ্টানের নিরাপত্তায় সজাগ রয়েছি।
উৎসবমূখর পরিবেশে এবারের আয়োজন আরো জমজমাট হবে আর নতুন বছর অতীতের সকল দু:খ কষ্টকে মুছে দিয়ে সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ শান্তি এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। নানা আয়োজনে ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হবে সাংগ্রাই উৎসবের ,আর শোভাযাত্রা শেষে অনুষ্টিত হবে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা। ১৪ এপিল বিকেলে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান,রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব,১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রি পানি বর্ষন,ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান আর সবশেষে ১৬ এপিল আলোকচিত্র প্রদশনী ,সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসবের।