বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন

NewsDetails_01

আবহাওয়া ভালো থাকায় আর সঠিকভাবে পরিচর্যায় বান্দরবানে বাম্পার ফলন হয়েছে ‘মিষ্টি কুমড়া’র। অল্প পুঁজি আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় মিষ্টি কুমড়ার চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ জেলার চাষিদের। এছাড়া বান্দরবানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব ভালো। সেজন্য পাইকারি ক্রেতাও মিলছে খুব সহজেই। সবমিলিয়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষে এবার লাভবান চাষিরা।

বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় কম বেশি মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়। সদর উপজেলার এম্পুপাড়া, টংকাবতী, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, বসন্তপাড়া, ব্রিকফিল্ড এলাকা ছাড়াও রুমা ও থানচি উপজেলায় এবার ব্যাপক ফলন হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার, আর বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অনেক চাষি।

স্থানীয় চাহিদার তুলনায় আবাদের পরিমাণ বেশি হওয়ায় জমি থেকেই পাইকারি ক্রেতাদের কাছে চুক্তিতে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছেন অনেক চাষিরা।

মিষ্টি কুমড়ার চাষের জন্যে জমি তৈরি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ও কৃষকদের মজুরিসহ অন্যান্য সবমিলে বিঘাপ্রতি খরচ হয় প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা জমিতে ৮শ থেকে প্রায় ১ হাজার পরিমাণে মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। যার পাইকারি বাজারদর ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা।

তবে স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করলে প্রায় দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়া সম্ভব বলেও জানান চাষিরা।

চিম্বুক এলাকার রিং রাউ ম্রো বলেন,’চলতি মৌসুমে তিনি ৮২ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারের ফলনও হয়েছে সন্তোষজনক। এতে করে বেশ লাভবান তিনি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকি ও শ্রম কম।

NewsDetails_03

একই এলাকার কৃষক ইয়াং ম্রো জানান,’অল্প খরচ আর স্বল্প পরিশ্রমে মিষ্টি কুমড়ার ফলন পাওয়া যায়। গাছে ফল আসার পরপরই জমি থেকে পাইকারিভাবে চুক্তিতে জমির ফসল বিক্রিও করা যায়। এছাড়া অন্যান্য ফসলের সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা সম্ভব হওয়ায় এটি চাষে এলাকার কৃষকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ বাড়ছে বলেও জানান তিনি

আবু রায়হান (পাইকারি ক্রেতা) জানান, চট্রগ্রামে শহরে মিষ্টি কুমড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। বান্দরবানের সঙ্গে চট্রগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। তবে প্রতিবছর মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়া যায়, তাই এইসময় টা আমরা মিষ্টি কুমড়ার সংগ্রহ করার জন্য পাহাড়ে চলে আসি।

আরেক পাইকারী বিক্রেতা মো. করিম বলেন, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ ও সাইজ খুব ভালো, তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদাও ব্যাপক। প্রতিবছর এ সময়টা আমরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিই।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার ২৪২ হেক্টর জমিতে ৪১৫৪ মেট্রিকটন মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয় আর ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫১২ মেট্রিকটন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন,পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী, তাই দিন দিন বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে এবং কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়া বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্ট করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেন, যা খেতে খুবই সুস্বাদু। মিষ্টি কুমড়া বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে এবং এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয়পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

আরও পড়ুন