বান্দরবান জেলা জুড়ে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা
৮ হত্যাকাগু
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার শসস্ত্র সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে ৮ জন নিহত হওয়ার পর জেলা জুড়ে চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ফের বড় ধরণের ঘটনার আশংকায় চরম আতংক বিরাজ করায় জেলা জুঁড়ে, ফলে জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী, চেকপোষ্টগুলো চালানো হচ্ছে তল্লাশী।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জেলার রোয়াংছড়ির খামতাং পাড়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (সংস্কার) এর শসস্ত্র সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় গোলাগুলিতে বম ও খ্যায়াং সম্প্রদায়ের ৮ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার পর এলাকা ছেড়েছে অনেক পাহাড়ী। ভয়ে উক্ত পাড়া থেকে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০ জন ও রুমার বম কমিউনিটি সেন্টারে ৬০ জন আশ্রয় নিয়েছে, তারা সবাই খ্যায়াং সম্প্রদায়ের।
রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাং পাড়ার বাসিন্দা শৈহ্লা খ্যায়াং জানান, গোলাগুলির পর ভয়ে থাকতে না পেরে আশ্রয় নিতে রোয়াংছড়ি সদরে পালিয়ে এসেছি, সামনে কি হবে জানিনা, তবে পরিস্থিতি ভালো নয়।
এদিকে গত শুক্রবার থেকে রোয়াংছড়ি ও রুমায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে আতংকের ছাপ, তারা এক কাপড়ে শিশুদের নিয়ে বাড়ি ছেড়েছে, পরিস্থিতি শান্ত হলে নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে তারা। আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে তাদের খাদ্য সরবরাহ করছে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন।
কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং এর বরাত দিয়ে শুক্রবার রাতে কুকি কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, জেলার রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি এই তিন উপজেলায় চার চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। যদি কোন ব্যক্তি নির্দেশনা অমান্য করে, তবে সে যেই হোক গুলি করা হবে। কুকি-চিন জনগোষ্ঠির রামথার পাড়ার কারবারি সহ আট জনকে সংস্কার পন্থী কতৃক ব্রাশ ফায়ার করে গুলি করায় এই কারফিউ জারি রাখা হলো, এই নির্দেশনার পরে উপজেলাগুলোর পাহাড়ী সড়কে পারতপক্ষে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেনা ড্রাইভাররা।
এদিকে বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গী সংগঠন ও কেএনএফ এর বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারনে গত ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞায় জেলার অন্তত দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল কার্যত পথে পথে বসার অপেক্ষায়, অনেক তাদের কর্মচারী ছাটাই করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, জেলার থানচি ও রুমার পর্যটক বহনকারী ২ শতাধিক নৌযান, ৩ শতাধিক চাঁদের গাড়ি ও ৩শ জন ট্যুরিষ্ট গাইড এখন বেকার, জুম চাষাবাদ করতে না পারার কারনে পাহাড়ীরা নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারছেনা, ফলে অর্থনৈতিক ভাবে চরম সংকট পার করছে ব্যবসায়িরা। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন হওয়ার পর সবচেয়ে বড় এই ৮ হত্যাকাগেুর পর জেলায় আরো বড় ধরণের ঘটনার আশংকা করছে স্থানীয়রা। ফলে উদ্বেগ, উৎকন্ঠ যে এখন মুখে মুখে। অনেক শ্রমিক ও ব্যবসায়ি উপজেলাগুলোতে যাচ্ছেনা, যারা নির্মান কাজে জড়িত তারা জেলা সদরে ফিরে আসছে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতি অর্থ সম্পাদক রাজিব বড়ুয়া বলেন, এই ঘটনার পর বান্দরবানের পর্যটন শিল্প নিয়ে ব্যবসায়িরা চরম হতাশ, এর থেকে উত্তোরনের উপায় সবাই মিলে বের করতে হবে।
এদিকে শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত্রের পর বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহতদের পরিবারের পক্ষে বম সোশ্যাল কাউন্সিলের নেতারা নিহতদের লাশ গ্রহন করে, এসময় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো: তারিকুল ইসলাম পিপিএম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারীর পাশাপাশি জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।