বান্দরবান-রুমা সড়ক ৮ দিনেও চালু হয়নি

purabi burmese market

বান্দরবান-রুমা সড়ক চালু করতে কাজ করছে সেনাসদস্যরা
বান্দরবান- রুমা সড়কে গত ৮ দিন ধরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে রুমা থেকে বান্দরবান সড়কে ২২কিলোমিটার এলাকায় পাহাড় ধসে পড়লে গত ১৩ জুন সকালে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় রুমা উপজেলায় বসবাসরত সরকারি- বেসরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণির লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র পাহাড়বার্তাকে জানায়, গত সপ্তাহে অতিবর্ষণের ফলে ২২কিঃমিঃ এলাকায় পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর সড়কটি আবার কবে নাগাদ চালু হয়ে এ সড়কে যানবাহন চলাচল চালু হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এছাড়া টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে রুমা-বান্দরবানের এই সড়কে বিভিন্ন জায়গায় খানা-খন্দক সৃষ্টি হয়ে সড়কের এপাস-ওপাস ভেঙ্গে গেছে।
রুমা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মংক্যচিং মারমা জানান, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে কয়েকদিন ধরে কর্মস্থল রুমায় যেতে পারছিনা।
রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে­ক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট উবামং মারমা জানান, গত ১৩জুন অফিসিয়ালি জরুরি কাজ থাকায় সকাল ৭টায় বাইকে করে রুমায় আসেন। ওয়াই জাংশন ফেলে কিছু সময় আসার পর বড় আকারে পাহাড় ধসের স্থানে বাইকে আটকে পড়েন। সেখান থেকে হেটে আসতে রুমা সদরে পৌছাতে লাগে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। রাস্তা ভাঙ্গনের ফলে যানবাহন না চলায় যাতায়াত করতে কি সমস্যা, ভূক্তভোগী সেই বুঝতে পারবেন, এমন কথা জানালেন তিনি।
রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা পাহাড়বার্তাকে জানান, বান্দরবান – রুমা সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে এক সভায় যোগদান করতে সাংগু নদীপথে বান্দরবানে যেতে হয়েছে। তবে বোট রিজার্ভ করে যাওয়া ব্যয় বহুল। জরুরি প্রয়োজনেও গরিব সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়া খুব কষ্টসাধ্য হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, বান্দরবান-রুমা সড়কে শুধু মাত্র দৌলিয়ান পাড়া ২২কিঃমিঃ এলাকা পাহাড় ধসে সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, তা নয়। ওয়াই জাংশন থেকে রুমার সদরে মহিলা ক্লাব পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে গর্ত ও ভাঙ্গনের চিত্র বিস্তৃত। তবে ২২কিলোমিটার এলাকার সড়কে পাহাড় ধসে জমে যাওয়া মাটি সরিয়ে দেয়া সংস্কার কাজ করতে দেখা গেলেও অন্যান্য স্থানে সংস্কারের কাজ করছে না। ফলে এ সড়কের দুরবস্থা কবে নাগাদ ভাল হবে তা জানেনা কেউ। এমন কথা পাহাড় বার্তাকে জানিয়েছেন খক্ষ্যংঝিরির বাসিন্দা, আবু তালেব, রুমা বাজারের ব্যবসায়ী হাসেম তাহের ও মংউচিং মারমা।
এ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মোহাম্মদ হারিছ মিয়া পাহাড়বার্তাকে জানান, ২২কিলোমিটার সড়কের ভাঙ্গন এলাকায় গত এক সপ্তাহ যাবত মাটি সরানো কাজ চলছে। এখানে ১টি বড় আকারে বোল ড্রোজার ও ২টি এস্কাভেটার দিয়ে শ্রমিকরা কাজ করছে। আজ কালের মধ্যে আরো দুইটি এস্ক্যাভাটারএসে যাবে।
কাজ থেমে না থাকার কথা উল্ল্যেখ করে ঠিকাদার আরো জানান, নরম মাটি হওয়ায় একদিকে ভাঙ্গনের মাটি সরানো কাজ চলছে, অন্যদিকে পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ছে। কাজ করা অবস্থায় পাহাড় থেকে মাটি ধসে পড়ে একটি গাড়ি এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একারণে কবে নাগাদ এ ভাঙ্গন অংশে যানবাহন চলাচল উপযোগি করা যাবে তা বলতে পারছেননা বলে জানালেন হারিছ মিয়া।
এদিকে অতিবর্ষণের ফলে রুমা উপজেলায় আউশ-আমন বীজতলা এবং বর্ষাকালীন বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বটতলি পাড়ার বাসিন্দা প্রুরুসাথুই জানান, গেল সাপ্তাহে প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়িদের জুমে সদ্য বপনকৃত আউশ ধান বীজ নানা প্রকার সবব্জি গজিয়ে উঠেনি। এসব বীজ জুমে পুনরায় বপন করলে মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় গজাবে কিনা, তাও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে জানালেন পাহাড়ি কৃষকরা।
অন্যদিকে রুমা উপজেলার অভ্যন্তরীণ মুননুয়াম, খামতাং ও বগালেক রাস্তাগুলোও এখন বেহাল দশা হয়েছে। ভাঙ্গনের খানা খন্ডকের পরিণত হওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।