বান্দরবান শহরে ক্রেতা ঠকানোর কারিগর যারা !
বান্দরবান জেলা শহরে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা। ক্রেতা ঠকানোর ব্যবসায়িদের এই জাল থেকে মানুষকে যেন কোন ভাবেই রক্ষা করতে পারছেনা ভ্রাম্যমাণ আদালত। দফায় দফায় একের পর এক অভিযান চালানো হলেও ভেজাল খাদ্য বিক্রি, ওজনে কম দেওয়া যেন ব্যবসায়িদের নিত্য দিনের কারবার। আর এ নিয়ে এস বাসু দাশ এর প্রতিবেদন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রেতাদের একের পর অভিযোগ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগের ভিত্তিতে বান্দরবানে বিভিন্ন দোকানে মিনার সয়াবিন ও এস.আমানত নামের ২টি সয়াবিন তেল এর বোতলে তেলের পরিমাণ কম পাওয়ার অভিযোগে ২ ব্যবসায়ী ও ১ তেল বিক্রয় কর্মীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, এসময় জব্দ করা হয় প্রায় ৯৫৯ লিটার তেল।
আজ শুক্রবার (১ মে) দুপুরে বান্দরবান বাজারের বিছমিল্লাহ স্টোরের নাসির উদ্দিন ও বালাঘাটা বাজারের ব্যবসায়ি প্রদীপ দাশ এর দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় ও তেল জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো.হাবিবুল হাসান।
আরো জানা গেছে, জেলার থানচি উপজেলার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ বিতরণের জন্য তেল ক্রয় করা হয়। আর সেই তেলের বোতলের ওজন ৫শ গ্রাম লেখা থাকলে পরিমানে আছে ৪শ গ্রাম। আর এই বিষয়টি থানচি উপজেলা প্রশাসন বান্দরবানে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবহিত করলে এই অভিযান চালানো হয়।
এসময় সয়াবিন তেল এর বোতলে তেলের পরিমান কম পাওয়ার অভিযোগে ২ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬৫ হাজার টাকা এবং একই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে জেলার রুমা উপজেলায় এক বিক্রয়কর্মীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে করোনা সংকটে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ত্রাণ বিতরণকারী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি পাহাড়বার্তাকে অভিযোগ করেন, অসহায় মানুষদের বিতরণের জন্য আমরা শত শত বোতল তেল ক্রয় করেছি, সেই বোতলেও ওজন কম, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমাদের বাড়তি টাকা ফেরত দিতে ব্যবসায়িরা যোগাযোগ করেছে।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনোর সময় বান্দরবান বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক কর্তৃক আদালতকে জরিমানা কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেন অনেকে।
তবে এসময় বান্দরবান বাজার মুদি দোকান ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক বিমল কান্তি দাশ বলেন, বান্দরবান বাজারে কোন প্রকার ভেজাল দ্রব্য সামগ্রী কেউ বিক্রয় করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি আরো বলেন, আমরা বাজারের প্রতিটা দোকানে মিনার সয়াবিন ও এস.আমানত সয়াবিন তেল ক্রয় বিক্রয় না করার জন্য নোটিশ দিয়ে দিবো।
আরো জানা গেছে, গত ১৭মার্চ বান্দরবান শহরের বাজারের স্বপ্নচূড়া সুপার সপের বিরুদ্ধে বেশি দামে নিত্য পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। আর কম দামে পণ্য বিক্রি করার কারনে এই সুপার সপের মালিক কর্তৃক এক ক্ষুদ্র পেঁয়াজ ব্যবসায়িকে প্রকাশ্যে মারধর ও পেঁয়াজ ও পণ্য মাপার মিটার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে।
জেলা শহরের বাজার মসজিদের সামনে ভ্যানে করে প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ টাকা দামে বিক্রি করছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি মো: এরশাদ। এসময় স্বপ্ন সুপার সপের মালিক পিন্টু দাশ এত কমদামে (৬০ টাকা প্রতি কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি না করার জন্য এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়িকে শাসান। এসময় গ্রাহকরা কম দামে এই পেঁয়াজ কিনতে চাইলে পিন্টু দাশ বাধা দেন এবং তারা পেঁয়াজ ও মাপার মিটার নিয়ে যান। এসময় পেঁয়াজ ব্যবসায়ি এরশাদকে কয়েকটি চড় থাপ্পর দেন। এভাবে ব্যবসায়িরা তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের কারচুপি, রাতারাতি বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে জেলা শহরে আলোচনায় আসে।
বান্দরবান সদর উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা মো.হাবিবুল হাসান জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে দেশের এই সংকটাপন্ন অবস্থায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের পরিমাণে তেল কম দেয়ার অভিযোগে আমরা এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি এবং জরিমানা আদায় করেছি।
এদিকে এই প্রতিবেদন লেখার পর পাহাড়বার্তার কাছে আসা প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায়, আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বান্দরবান বাজারের মমতাজ স্টোর কে একই অভিযোগে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৮০ বোতল তেল জব্দ করেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.হাবিবুল হাসান।
সংবাদটিতে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করেছেন,পাহাড়বার্তা’র সংবাদকর্মী কৌশিক দাশ ও ইয়াছিনুল হাকিম চৌধুরী।