বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনই স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির সূতিকাগার : কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা
পার্বত্য আবৃত্তি উৎসব
পাহাড়ি জেলাগুলোর মধ্যে খাগড়াছড়িতে গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো সকাল-সন্ধ্যা পার্বত্য আবৃত্তি উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। দিনব্যাপি আয়োজিত এই উৎসবে আবৃত্তির পাশাপাশি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠির বর্ণিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিলো মুগ্ধ করার মতো।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ’র সার্বিক সহযোগিতায় এবং ‘সম্মিলিত আবৃত্তি জোট-চট্টগ্রাম’র আয়োজনে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত উৎসবের সমাপনী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, খাগড়াছড়ি সংসদ সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদায় শরণার্থী টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
তিনি তাঁর বক্তব্যে উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, যে কোন জাতির ভাষা-শিল্প ও সংস্কৃতি সামগ্রিক উৎকর্ষতার অন্যতম মাপকাঠি। পার্বত্য এলাকার ভাষা সংরক্ষণে সরকার প্রাথমিক স্তরে বিনামূল্যে বই প্রদান করছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরির জন্যও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আবৃত্তি উৎসবে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের প্রায় আড়াই শতাধিক আবৃত্তি শিল্পীরা অংশ গ্রহন করে। উৎসবটি তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে প্রথম। এই ধরনের একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি আবৃত্তি শিল্পী ও কবিতা প্রেমীরা। তাঁরা এই ধরনের আয়োজনের জন্য আয়োকজদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনেকে বলেছেন এই উৎসব’র মাধ্যমে পাহাড় আর সমতলের আবৃত্তি শিল্পীদের একটি সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি হবে। এই আবৃত্তি উৎসবের মধ্যে দিয়ে এই জেলায় নতুন কবিদের অনুপ্রেরণা যোগাবে, কবিতা পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে, নতুন নতুন কবি সৃষ্টি হবে বলে মনে বরেন অনেকেই।
এই উৎসবে বাংলা কবিতার পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তনচংগ্যা ও অহমিয়া ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করেন বিভিন্নি সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। করিরা বলেছেন কবিতা হচ্ছে সংস্কৃতির ধারক বাহক, মনে ভাষা প্রকাশের মাধ্যম।
সভায় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ১৯৫২ সালের মহান শহীদদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আরো বলেন, বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে রক্ত দিয়ে জীবন উৎসর্গকারীরাই বাঙালি জাতিরাষ্ট্রকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র সাহসী নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে সেটির সফল দৃশ্যকাব্য রচিত হয়েছে।
‘পার্বত্য আবৃত্তি উৎসব আয়োজক কমিটি’র আহ্বায়ক ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নিলোৎপল খীসা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উৎসব আয়োজন’র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরী।
সম্মিলিত আবৃত্তি জোট-চট্টগ্রাম’র সা. সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা. বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক প্রভাংশু ত্রিপুরা, প্রগতি সংঘ-খাগড়াছড়ি’র সভাপতি মো. জান-ই আলম এবং আবৃত্তি জোট’র সহ-সভাপতি বনকুসুম বড়ুয়া। সকালে একই প্রাঙ্গনে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।
এসময় ‘সম্মিলিত আবৃত্তি জোট-চট্টগ্রাম’র সভাপতি ফারুক তাহের’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন, উৎসব আয়োজক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরী।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শানে আলম এবং জেলা পরিষদ সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া।
উৎসবে একক কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন কবি হোসাইন কবির, কবি বিজন মজুমদার, কবি মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, কবি চিংলামং চৌধুরী, কবি মৃত্তিকা চাকমা, কবি রিপন তালুকদার, আবৃত্তি শিল্পী বীর বিক্রম ত্রিপুরা ও হারুন-অর রশিদ, কবি শুভ্র জ্যোতি চাকমা, আবৃত্তিশিল্পী সুপ্তা চাকমা, প্রতিভা ত্রিপুরা, কবি মলয় কিশোর ত্রিপুরা, লাপ্রুসাইন মারমা, পঙ্কজ আসাম, অজিত কুমার তঞ্চগ্যা, ঝুমালিয়া চাকমা, পূর্ণা চাকমা, মুকুল কান্তি ত্রিপুরা, আবৃত্তি শিল্পী জেকি চাকমা, প্রভাষক পারভীন আকতার এবং মুহাম্মদ শহীদউল্লাহ
ব্যতিক্রমী এই আবৃত্তি সন্ধ্যায় ‘সম্মিলিত আবৃত্তি জোট-চট্টগ্রাম’র সদস্য সংগঠন ছাড়াও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাংলাদেশ আবৃত্তিশিল্পী সংসদ-বান্দরবান, উজানী আবৃত্তি সংসদ-খাগড়াছড়ি, বিশ্ব ভরা প্রাণ-খাগড়াছড়ি, নোয়ারাম চাঙমা সাহিত্য সংসদ, চাকমা সাহিত্য বাহ, জেলা সাহিত্য পরিষদ-খাগড়াছড়ি এবং দীঘিনালা উপজেলার ‘দীপালোক আবৃত্তি অঙ্গন’।