বিজিবি’র অপেশাদার আচরণ ছিল ঘটনার দিন

খাগড়াছড়ির সহিংসতার তদন্ত প্রতিবেদন

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গত ৩ মার্চের সহিংসতার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ গঠিত কমিটি গতকাল বুধবার (১১ মার্চ) রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে হয়েছে দাবি করেছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার রিজাউল করিম। এর বেশী প্রতিবেদনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি তিনি।

তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে,ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজিবি সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ভিডিও চিত্র এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনার পেছনের ৫ টি তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মন্তব্যসহ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিজিবি’র পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে জড়িয়ে হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও হত্যার অভিযোগ থাকলেও নিহত গ্রামবাসীরা নিরস্ত্র ছিল বলে জানানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

NewsDetails_03

আরো জানা গেছে,বিজিবির ওপর গ্রামবাসী ও নিহতদের হামলার অভিযোগটির সত্যতা পায়নি কমিটি। নতুন বিদ্যুৎ লাইনের কাজের জন্য বাড়ির পাশের কাঠাল গাছ কেটে ৫ টুকরো গাছ ট্রাক্টরে(ট্রলি) করে স’মিলে নেয়ার পথে বাধা দিয়েছিল বিজিবি সদস্যরা। এ সময় বাকবিতন্ডতা হয় নিহত শাহাব মিয়া ও মফিজ মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। এতে গ্রামের অন্য কেউ ছিল না। তদন্ত কমিটির কাছে গত ১০ মার্চ ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক বিজিবি সদস্যের বক্তব্যে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার কথা স্বীকার করেছে। নিহত বিজিবি সদস্য মো. শাওন খানের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়েছে। ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্যরা গুলি ছোঁড়ার কিছু সময় আগে ধারণ করা কয়েক সেকেন্ডের এক ভিডিও চিত্রে দেখা যায় নিহত বিজিবি সদস্য শাওন খানের কাছে কোন অস্ত্র ছিল না।

ভিডিওতে শাওনকে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। আর নিহত এক ব্যক্তি বিজিবি সদস্যের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালানোর কথা বিজিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও একজন প্রশিক্ষিত বিজিবি জোয়ান থেকে পঞ্চাশ বয়সী এক ব্যক্তির পক্ষে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গাছ কাটা ও পরিবহনে বিজিবির বাধা দেয়ার কাজ তাদের দায়িত্বে ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ঘটনার দিন বিজিবি সদস্যরা যদি পেশাদার ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করত তাহলে এতো বড় ঘটনা এড়ানো যেত বলেও মন্তব্য করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার রিজাউল করিম ছাড়াও তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান ও সহকারী বন সংরক্ষক মোহাম্মদ হোসেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে করে বিজিবির সাথে সংঘর্ষে ৫ জন নিহত ও ১ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। এ ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ৬ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এ ঘটনায় বিজিবি ও নিহতদের পরিবার পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে মাটিরাঙ্গা থানায়।

আরও পড়ুন