এ দুই উপজেলার সহস্রাধিক দরিদ্র উপজাতি ও বাঙ্গালী পরিবারের মানুষ মৌসুমী ফুলের ঝাড়ু বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। এটি বাড়ি ঘরের ঝাড়ু দেয়ার কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি পাকা ভবন নির্মাণে শ্রমিকরা ব্যবহার করছে। সমতল জেলায় ও বিদেশে এ ঝাড়ু ফুলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ফুলের ঝাড়ুর প্রতি আঁটি’র দাম বেড়েছে দ্বিগুন। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলের ঝাড়ু সংগ্রহকারীরাও এবার বেশ লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুলের ঝাড়ু চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিদেশে বাজারজাত হবে বলে সংগ্রহকারী ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের মতে, অর্থ সংস্থানের জন্য পাহাড়ের বনজ সম্পদ বলতে বাঁশ, গাছ আর ফুলের ঝাড়ুই প্রধান। ফুলের ঝাড়ু সংরক্ষণ ও চাষ ব্যবস্থা স¤প্রসারণের কোন চিন্তা আদৌ হয়েছে কিনা জানা নেই। অবশ্য ফুলের ঝাড়ুর কোন বীজের সন্ধান এখনো হয়নি। এ বিষয়ে উদ্ভিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে একটি অন্যতম সম্পদের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের আত্মকর্মসংস্থানসহ সরকারেরও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাস বিভিন্ন পাহাড় থেকে প্রাকৃতিকভাবে জেগে উঠা ঝাড়ফুল সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। এ সময় লামা ও আলীকদম উপজেলার সর্বত্রই এ ফুলের ঝাড়ু দেখা যায় সচরাচর। বর্ষা মৌসুমে প্রবল বৃষ্টির কারনে পাহাড়ের যে অংশ ধসে পড়ে ঠিক সে অংশেই ঝাড়ু ফুল গজায়। ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা সাইজের কেটে ১০ থেকে ১২টি ফুল একত্রিত করে এক মুটো করে তা বেঁধে এক একটি ঝাড়ু তৈরি করা হয়।
ঝড়ফুল সংগ্রহে নিয়োজিত লামা উপজেলার ছাগল খাইয়ার আশ্রাফ উদ্দিন ও ছৈয়দ মিয়া বলেন, একদিনে জনপ্রতি পাহাড় থেকে ২-৩শ ফুল সংগ্রহ করা যায়। পরে ৩০ থেকে ৪০টি করে ঝাড়ু এক সাথে বেঁধে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে তোলা হয়। এ ধরণের একটি আঁটির বর্তমান বাজার মূল্য ৩শ ৬০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৩শ টাকা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রমজান আলী ও আলীকদম উপজেলার সদরের ব্যবসায়ী দৌলত খান জানিয়েছেন, ইদানিং এ ঝাড়ু দেশের সমতল অঞ্চলসহ বিদেশও এর কদর থাকায় দাম বেড়েছে। আমরা স্থানীয়ভাবে কিনে চট্টগ্রাম ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের নিকট পাইকারী বিক্রি করি।
লামা বাজারে ফুলের ঝাড়ু বিক্রেতা মনোয়ারা বেগম বলেন, ৮০টি ফুল ১৬০টাকায় পাইকারী বিক্রি করছেন, এবার তিনি ঝাড়ফুল বিক্রি করে প্রায় ৩০হাজার টাকা পেয়েছেন।
স্থানীয় ঝাড় ফুল সংগ্রহকারী মরিয়ম, জসিমসহ আরোও অনেকে জানান, ফুলের ঝাড়ুর বিক্রির অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভাল অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। শুনেছি এ ফুল এখন বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। তাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে অনেক ব্যবসায়ী আমাদের কাছ থেকে এ ঝাড়ফুল পাইকারী কিনছেন। দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পাহাড়ের পর পাহাড় ঘুরে ফুলের ঝাড়ু সংগ্রহ ও বিক্রির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা অনেক পরিবারে পারিবারিক স্বচ্ছতা অনুভব করছি।
ঝাড়ফুল সংগ্রহকারী আবুল হোসেনসহ অনেকেই বলেন, প্রতিবছর জুম চাষের নামে পাহাড়ে উপজাতিদের দেয়া আগুনের কারণে ঝাড় ফুল ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। পাহাড়গুলো আগুন থেকে রক্ষা করতে পারলে ঝাড়ফুল সংরক্ষণের পাশাপাশি এর সম্প্রসারণও সম্ভব হবে।
জানা গেছে, দেশের সমতল এলাকা থেকে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরাও আসেন এখানে ফুলের ঝাড়ু কিনতে। তারা নির্দিষ্ট মৌসুমে জেলার সকল হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেন ওসব ফুলের ঝাড়ু। পরে শুকিয়ে ট্রাক যোগে নিয়ে যান দেশের সমতল অঞ্চলে।
উপজেলার ইয়াংছায় কথা হয় ঢাকার ব্যবসায়ী মো. বেলাল এর সাথে। তিনি জানান, ঢাকাসহ সারাদেশে ফুলের ঝাড়ুর চাহিদা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই দামও একটু বেশি। এ মৌসুমে লামা থেকে ২ ট্রাক ফুলের ঝাড়ু ঢাকার বিভিন্নস্থানে পাইকারী দিয়েছি। প্রতি ট্রাকে ২ লাখ টাকা করে লাভ হবে। তিনি বলেন, আমার মত আরো অনেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ঝাড়ফুল পাইকারী কিনে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ভারত ও সৌদি আরবসহ বেশ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানী করা হয়। এবার জেলা থেকে দেশের সমতল অঞ্চলে প্রায় কোটি টাকার ফুলের ঝাড়ু বাজারজাত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. নুরে আলম জানান, পাহাড়ের ঝাড়ফুল সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের কোন ব্যবস্থা নেই। সরকারীভাবে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিলে এটি একদিন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।